• বাবা-মাকে খুন, বনগাঁতে হামলা! অভিযুক্তের পিসি বললেন, ‘ডিভোর্সের পরেই মাথাটা গিয়েছে...’
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • শান্ত স্বভাবের ছেলেটা ছোট থেকেই মেধাবী। অঙ্ক, ফিজিক্সে ছিল ঝরঝরে। আর সেই সুবাদেই দেশের অন্যতম নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটেক করার সুযোগও পেয়েছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করতে না করতেই জুটেছিল নামী সংস্থার মোটা বেতনের চাকরি। অন্তত পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে।

    পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা বছর ৩৫-এর হুমায়ুন কবির ওরফে আশিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাবা-মাকে কোপানোর। মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। শুধু তাই নয়, বনগাঁতে মাদ্রাসায় ঢুকে হামলা চালান তিনি। বুধবার সকালে বাড়ির বাইরে উদ্ধার হয় তাঁর বাবা মুস্তাফিজুল রহমান ও মা মমতাজ পারভিনের রক্তাক্ত দেহ। তারপর থেকেই উধাও ছিলেন হুমায়ুন। সন্ধ্যায় বনগাঁর একটি মাদ্রাসায় ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঘটনায় ছ’জন জখম হয়েছেন। গোটা ঘটনায় রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।

    কিন্তু হুমায়ুন এ কাজ করতে পারেন, তা মানতে পারছেন না তার পিসি এবং পিসেমশাই। পিসি রিনা চৌধুরী দাবি করেছেন, তাঁর ভাইপো বরাবর মেধাবী। বর্ধমান সিএমএস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটেক করেন তিনি। ক্যাম্পাসিংয়েই স্যামসাংয়ের মতো সংস্থাতে চাকরি জুটেছিল। এর পর আর কেরিয়ারে ফিরে তাকাতে হয়নি। সবটাই চলছিল মসৃণ ভাবেই। বছর তিনেক আগেই বিয়েও করেন তিনি। যদিও সেই বিয়ে টেকেনি। রিনা বলেন, ‘ডিভোর্সের পরেই ওর মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। তবে টাকা পয়সার উপর ওর কোনও কালেই লোভ ছিল না। যা রোজগার করত, সবটাই দিয়ে দিত লোকজনকে। শান্ত ছিল খুব।’ যদিও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে, বরাবরই খুব রাগী, জেদি ও একগুঁয়ে ছিলেন হুমায়ুন

    অন্যদিকে, পিসেমশাই চৌধুরী রফিকুল আলম বলেন, ‘ও চাকরির জন্য দিল্লিতে থাকত। সেই সময়ে প্রায় ১ মাস নিখোঁজ ছিল। ওর বাবা খুঁজতে দিল্লিও গিয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছিলাম, সেই সময়ে ওকে নাকি হিমাচল প্রদেশ থেকে পাওয়া গিয়েছিল। এর পর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল ছেলেটাকে। সেই সময় থেকেই ও বাড়ি থেকে বার হতো না। সারাদিন ঘুমতো, রাতে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে থাকত।’

    বাড়ির সবথেকে সুবোধ ছেলেটাই যে এই ধরনের দু’টি ভয়াবহ অভিযোগে জড়িত, তা মানতে নারাজ পরিবারের সদস্যরা। হতাশ গলায় তাঁরা বলছেন, ‘সবটাই শুনতে পারছি, কোথা থেকে কী হলো বুঝতে পারছি না!’

    বনগাঁ পুলিশ বুধবার দাবি করেছিল, হুমায়ুন কবির মানসিক ভাবে সুস্থ নয়। ইতিমধ্যেই তদন্তের জন্য মেমারি থানার পুলিশ বনগাঁয় গিয়েছে। হুয়ায়ুন ল্যাপটপে জেহাদিমূলক ভিডিয়ো দেখতেন বলে সূত্রের খবর। ঠিক কী ‘মাইন্ড সেট’ নিয়ে চলছিলেন তিনি, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

    (রিপোর্টিং: গোপাল সোনকার)

  • Link to this news (এই সময়)