নবান্ন সংলগ্ন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই তৈরি হওয়া অবৈধ বহুতল নিয়ে জেলাশাসকের কাছে এ বার রিপোর্ট তলব করল নবান্ন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নবান্নের ৫০০ মিটারের মধ্যে চিহ্নিত অবৈধ বহুতলগুলির ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, হাওড়া পুরসভার কাছে তা জানতে চেয়েছে জেলা প্রশাসন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনের চিঠি পাওয়ার পরে তাদের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় তৈরি হওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ বহুতল এবং আংশিক অবৈধ বহুতলের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। যেখানে পুরসভা অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে দু’টি বা তিনটি তলা তৈরি করা হয়েছে, সেই বাড়িগুলির বিরুদ্ধে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, বা না নিলে কেন নেওয়া যায়নি, তা বিস্তারিত ভাবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নবান্নের কাছে শিবপুর রোড সংলগ্ন হালদারপাড়া লেনে একটি বেআইনি বহুতল তৈরির অভিযোগ সামনে আসতেই পুরসভা-সহ বিভিন্ন মহলে হইচই পড়ে যায়। পাশাপাশি, পুরসভার একটি বৈঠকে বিল্ডিং বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। সব মিলিয়ে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে গত চার-পাঁচ বছর ধরে চলা নানা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসা শুরু হয়। ঠিক এই সময়েই হাওড়া জেলা প্রশাসন নবান্নের নির্দেশে পুরসভার কাছে অবৈধ বাড়িগুলির বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ চেয়ে পাঠায়।
নবান্নের ওই নির্দেশ আসার পরেই পুরসভায় কার্যত হুলস্থুল পড়ে যায়। পুরকর্তাদের নির্দেশ পেয়ে বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকেরা নড়েচড়ে বসেন। নবান্নের ৫০০ মিটারের মধ্যে যে সব অবৈধ বাড়ি আছে, সেগুলির তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত নবান্নের কাছেই ১৪টি অবৈধ বাড়ির সন্ধান মিলেছে। এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত শিবপুরের কাজিপাড়া লেনে দু’টি বাড়ি সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, নবান্নের কাছেই কাজিপাড়া মোড়ে জি টি রোডের দু’পাশে দু’টি বহুতলের মধ্যে একটিতে তেতলার অনুমোদন নিয়ে চারতলা এবং আর একটিতে চারতলার অনুমোদন নিয়ে ছ’তলা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, পুরসভার পক্ষ থেকে প্রতিটি অবৈধ বাড়ির ক্ষেত্রেই নোটিস দিয়ে দায় সারা হয়েছে। খুব কম ক্ষেত্রেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজিপাড়া লেনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানকার অবৈধ বাড়ি দু’টির কাজ বন্ধ থাকলেও ভেঙে ফেলা হয়নি। অন্য দিকে, জি টি রোডের উপরে আংশিক অবৈধ বাড়ি দু’টির ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। বর্তমানে প্রতিটি তলাতেই লোকজন বসবাস শুরু করে দিয়েছেন।
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রতিটি অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে যা করার, তা-ই করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই প্রথমে নোটিস দেওয়া হয়েছে। তার পরে শুনানি হয়েছে। বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে। যাঁরা মানেননি, তালিকা অনুযায়ী তাঁদের অবৈধ অংশ পুরসভাই ভেঙে দেবে।’’
পুরকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, গত সাত বছর ধরে হাওড়া পুরসভায় নির্বাচিত বোর্ড নেই। প্রশাসকমণ্ডলী দিয়ে চলছে পুরসভা। ওয়ার্ড-ভিত্তিক পুরপ্রতিনিধি না থাকায় রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নিকাশি-সহ সমস্ত পুর পরিষেবার ক্ষেত্রে পুরসভার নিজস্ব লোকবলের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে হাওড়ার অলিগলিতে বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রেও
নজরদারির ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে দাবি পুরকর্তাদের। আর সেই কারণেই রাজ্যের প্রধান সচিবালয়ের ৫০০ মিটারের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।