• অধ্যাপনার অবসরে সটান পাহাড়ে পাড়ি, মাউন্ট গিলুউইয়ের শীর্ষে প্রথম ভারতীয় মহিলা
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    সাফল্যের তালিকায় আগেই ছিল মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো ও মাউন্ট এলব্রুশ। প্রথমটি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, দ্বিতীয়টি ইউরোপের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি। মাত্র ৪৬ দিনের ব্যবধানে দুই শৃঙ্গ জয়ের নজির গড়েছিলেন পাঁশকুড়ার বাসিন্দা অর্পিতা পাত্র সেটা ছিল ২০২৪।

    ২০২৫–এ তাঁর শৃঙ্গ জয়ের তালিকায় যোগ হলো আরও দু’টি। মাত্র আট দিনের ব্যবধানে ওশিয়ানিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কোজ়িয়াসকো ও সর্বোচ্চ আগ্নেয় শৃঙ্গ মাউন্ট গিলুউই জয় করলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে মাউন্ট গিলুউই জয়ের রেকর্ডও দাখিল হলো তাঁর নামে।

    অর্পিতা পেশায় আইআইটি বেঙ্গালুরুর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপিকা। ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী। পাশাপাশি, প্রকৃতিকে জানার অদম্য নেশা। একাই জাহাজে বিশ্ব ঘোরা কনিষ্ঠতম নাবিক জেসিকা ওয়াটসনের বায়োপিক ‘ট্রু স্পিরিট’ দেখে অনুপ্রাণিত হন অর্পিতা।

    তার পরেই সিদ্ধান্ত নেন, পাহাড়ে চড়বেন। নিজের অভিযানের নাম দেন ‘এক্সপিডিশন অপরাজিতা’। কিন্তু পর্বতারোহণের কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না তাঁর। সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন পর্বতারোহী সত্যব্রত সিদ্ধান্তের সঙ্গে।

    কিন্তু নিজে কতখানি দক্ষ, তা কী ভাবে যাচাই করবেন? ২০২৪–এর এপ্রিলে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করলেন। ছিল না কোনও মেডিক্যাল সাপোর্ট। মাত্র পাঁচ দিনে পাড়ি দিয়েছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘার পাঁচ হাজার মিটার পথ। তাতেই জুটে গেল নতুন বন্ধু— আত্মবিশ্বাস। সে বছরই রওনা দেন কিলিমাঞ্জারো ও এলব্রুশ জয়ের উদ্দেশে। সফলও হন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়।

    চলতি বছরের মে মাসে তিনটি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্য নিয়েছেন অর্পিতা। তার মধ্যে ১৭ মে জয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট কোজ়িয়াসকো, তার আট দিনের মাথায় পা রেখেছেন পাপুয়া ও নিউ গিনিতে অবস্থিত ৪৩৬৭ মিটার উঁচু মাউন্ট গিলুউই–তে। দু’টি দেশই ওশিয়ানিয়া মহাদেশের অন্তর্গত।

    ২৫ মে সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটে গিলুউই শৃঙ্গে পৌঁছে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই শৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড করেন তিনি। মাত্র তিন ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিটে এই শৃঙ্গ জয় করেছেন অর্পিতা।

    গতির নিরিখে মহিলা অভিযাত্রীদের মধ্যে অর্পিতার স্থান এখন তৃতীয়। কিন্তু পাপুয়া ও নিউ গিনি থেকে এখনই ফিরছেন না তিনি। এ বারে লক্ষ্য ওই দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট উইলহেল​ম। চলতি মাসেই শুরু করবেন অভিযান।

    অধ্যাপিকা হওয়ার পাশাপাশি ক্রিপ্টোগ্রাফার, ফটোগ্রাফার, বিজ্ঞানী ও ভূপর্যটক হিসেবে পরিচিতি আগেই পেয়েছিলেন তিনি। এ বারে যোগ হলো নতুন পালক— পেশাদার পর্বতারোহী।

    তাঁর কথায়, ‘গত বছরেই পর্বতারোহণ শুরু করেছি। প্রথম বারের পরে দ্বিতীয় বারও সাফল্য পেলাম।’ অধ্যাপনার ব্যস্ত জীবন সামলে কী করে এত কিছু করছেন অর্পিতা? হাসতে হাসতে তাঁর জবাব, ‘চাকরি করতে গিয়ে বছরে কিছু ছুটি বরাদ্দ থাকেই। সেগুলোকেই কাজে লাগাই।’

    এই সাফল্যে খুশি তাঁর বাবা–মা–ও। অর্পিতার বাবা অহিভূষণ পাত্র প্রাক্তন শিক্ষক। মেয়ের সাফল্যে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপনার পাশাপাশি পর্বত শৃঙ্গ জয় খুব–একটা সহজ কাজ নয়। অর্পিতা এতেও সফল হচ্ছে। বাবা হিসেবে গর্ব হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)