সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
ই–কমার্স সংস্থার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দাঁতনের কামারশালা। যে আধুনিকতার দাপটে ঝাঁপ বন্ধ হতে বসেছিল, তাকেই আপন করে এখন বাঁচতে চাইছেন এই পেশায় যুক্ত মানুষগুলি।
ই-কমার্স সংস্থাগুলি যেন অক্সিজেন দিয়েছে হাপরে। দাঁতনের কামারশালার জিনিস এখন যাচ্ছে সারা ভারতে, মূলত উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে। ডাব কাটার জন্য বড় কাটারি, মাংস কাটার চপার বা মাছ কাটা বড় বঁটি অনলাইনে বিকোচ্ছে রমরমিয়ে।
এখন হার্ভেস্টারে বিঘের পর বিঘে জমির ধান কয়েক মিনিটে কাটা হয়। ফলে কাস্তের ব্যবহার উঠেই গিয়েছে। সুপারি কাটার জন্য এখন জাঁতির ব্যবহার আর তেমন নেই। কাটা সুপারিই মেলে বাজারে। ফলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি কমে গিয়েছিল এগুলির।
স্রেফ মেদিনীপুরের দু’টি মেলার উপরে ভরসা করে থাকতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন ভিন রাজ্যেও দাঁতনের বঁটি, কাটারি, জাঁতি, চপার পৌঁছে যাওয়ায় প্রাণ ফিরেছে কামারশালাগুলিতে। তবে এখন আর হাতে টানতে হয় না। হাপর চলে বিদ্যুতে। তবে হাম্বার চালানোর পরিশ্রম কিন্তু এখনও করতে হয়।
দাঁতনের বরেন্দ্র লৌহ শিল্প কুটিরের মালিক রঞ্জিত রানা, ভগবান রানারা বলেন, ‘শিল্পকে বাঁচাতে অন্য পথ খুঁজতে শুরু করি। তখনই অনলাইনে বিক্রির কথা মাথায় আসে। ই-কমার্স সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে সুফলও মিলেছে।’
ভগবান বলেন, ‘প্রায়দিনই অর্ডার মেলে। ঝক্কিও কম। বাড়ি থেকেই ই-কমার্স সংস্থার লোকজন জিনিস নিয়ে চলে যায়। পৌঁছে দেয় তামিলনাড়ু, কেরালা, ওড়িশা, অসমে। আমাদের রাজ্যেও বিভিন্ন জায়গায় যায়।’
আপাতত দু’টি অ্যাপ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচটি অর্ডার আসছে ভগবান রানাদের। আট পুরুষের ব্যবসা নিয়ে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, অনলাইনেই বর্তমানে সেটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী গণেশ রানা।
তিনি বলেন, ‘ডাব কাটার জন্য বড় কাটারি, মাংস কাটার চপার বেশি বিক্রি হয় অনলাইনে। এছাড়াও নানা মাপের বঁটি, জাঁতি, কাস্তে, হাতুড়িও বিক্রি হয়।’ আরও একটা সমস্যার সমাধান হয়েছে এতে।
গণেশ জানিয়েছেন, আগে বাইরে থেকে কেউ দাঁতনে এসে চপার বা কাটারি কিনে নিয়ে যেতে পারতেন না। রাস্তায় পুলিশ ধরত। অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় এখন সেই সমস্যা নেই। বর্তমানে ১৩টি প্রোডাক্ট অনলাইনে বিক্রি করছেন এঁরা। গণেশ বলেন, ‘অনলাইনে বেচার জন্য প্রতিটি সামগ্রী বানিয়ে ছবি দিতে হয়। তবে ব্যবসা বাড়ছেও তাতে।’