• সমতলেও চা বাগান! নজির বি গার্ডেনের
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া

    চা গাছ সাধারণত জন্মায় পাহাড়ি এলাকায়। তার জন্য লাগে ঢালু জমি আর প্রচুর বৃষ্টিপাত। সেই চিরাচরিত ধারনাকে বদলে দিল শিবপুর বি গার্ডেন। সমতলে চা বাগান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সেখানকার বিজ্ঞানীরা।

    কয়েক মাস আগে হাওড়ার শিবপুরে অবস্থিত আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটালিক্যাল গার্ডেনে প্রায় এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে চা গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল। এর জন্য দার্জিলিং, অসম এবং ডুয়ার্স থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছের চারা এনে সেগুলিকে খুব যত্ন করে বসানো হয়।

    পাহাড়ি মাটিতে যে গাছ বেড়ে ওঠে, তারা দক্ষিণবঙ্গের জল আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে গোড়া থেকেই সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ।

    উদ্যান বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বর্তমানে গাছগুলি সম্পূর্ণ সতেজ ও সুস্থই রয়েছে। গাছগুলো ভালো ভাবেই বেড়ে উঠছে।

    কৃত্রিম ভাবে গড়ে ওঠা এই চা বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্য যাতে সাধারণ মানুষ উপভোগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার থেকে সেটিকে জ‍নসাধরণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। কয়েক বছর আগে কলকাতার ইকো পার্কে একই ভাবে চা গাছের চারা বসানো হয়েছিল।

    যদিও সেটা খুব একটা সফল হয়নি। তাহলে কোন জাদুমন্ত্রবলে সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুললেন বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ? এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত উদ্যান আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণবঙ্গের প্রতিকূল আবহাওয়ায় কোন প্রজাতির চা গাছ টিকে থাকতে পারে, সেটা বোঝার জন্য মোট পাঁচ রকমের চা গাছ লাগানো হয়েছে। তার আগে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে।

    তারপরে তিনফুট গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে চা গাছের চারা বসানো হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। চা গাছের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া ও বৃষ্টির জল দরকার হয়। সেই পরিবেশ তৈরি করতে অটোস্প্রিঙ্কলার মেশিন থেকে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর চা গাছে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    গ্রেট বেনিয়ান ট্রি-র পাশে ঝিলের ধারে উঁচু করে ঢিপি বানানো হয়েছে। যাতে সেই জমিতে কোনও ভাবেই জল দাঁড়াতে না পারে। তার মধ্যেই চা গাছের চারা বসানো হয়েছে। পাশেই বড় বড় গাছ থাকায় চা গাছে সরাসরি রোদ পড়ছে না।

    ঠিক যেমনটা উত্তরবঙ্গের চা বাগানে দেখতে পাওয়া যায়। বোটানিক্যাল গার্ডেনে যুগ্ম অধিকর্চা দেবেন্দর সিং বলেন, ‘আমরা যতগুলি চা গাছ বসিয়েছিলাম, তার ৮০ শতাংশই এখানকার জল-আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। গাছগুলির বৃদ্ধির হার যথেষ্ট ভালো। তবে প্রচণ্ড গরমে কিছু গাছ মারা যায়। সেখানে আবার নতুন করে গাছ বসানো হয়েছে।’

    পুরোনো তথ্য ঘেঁটে বি গার্ডেনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ১৭৮০ সালে বি গার্ডেনে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে চা গাছ লাগান ব্রিটিশ কর্নেল রবার্ট কিড। সেই ইতিহাস মনে করাতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেটে একটি নোটিস বোর্ড লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে একটি কিউআর কোড রয়েছে। সেটা স্ক্যান করলেই ভারতে চা উৎপাদনের ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে উঠবে।

    বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গবেষক আক্রামূল হক বলেন, ‘ডুয়ার্সের সঙ্গে এখানকার তাপমাত্রার খুব একটা পার্থক্য নেই। ঢালু জমি তৈরি এবং জলের জোগান দেওয়াটাও খুব একটা কঠিন কাজ নয়। চা গাছের জন্য আধো ছায়া, আধো আলো পরিবেশ লাগে। সেটাও বি গার্ডেনে রয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে চা গাছ তৈরি করা যেতেই পারে। কিন্তু পাহাড়ি চায়ের মতো ফ্লেভার পাওয়া যাবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)