অয়ন ঘোষাল: ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (Monsoon) চলতি বছরে ২৫ মে তারিখে কেরালায় আগমন করেছে, যা সাধারণত ১ জুন ভারতে আসে। গত ১৭ বছরে এই প্রথম এত আগে বর্ষা ভারতে প্রবেশ করেছে। ২৮ মে-র মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে আগামী ৪ মাসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। গাঙ্গেয় সমভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে শিয়ালদহ ডিভিশনের পক্ষ থেকে তৎপর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ (২৮.০৫.২০২৫) শিয়ালদহ ডিভিশনের DRM-এর নেতৃত্বে এক জরুরি বৈঠকে যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং ট্রেন পরিষেবার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে-
১. বিদ্যুৎ বিভ্রাট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ডিজেল জেনারেটর (DG set) বসানো হয়েছে। ট্র্যাকে জলজট প্রতিরোধে ও ভারী বৃষ্টির সময় দ্রুত জল নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পাম্প বসানো হয়েছে।
২. টানা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে একটি এমার্জেন্সি কন্ট্রোল সেল, যেখানে বিভিন্ন দপ্তরের অফিসাররা উপস্থিত থাকবেন। অপারেটিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল, সিগন্যাল ও টেলিকম বিভাগের অভিজ্ঞ কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নজরদারি করবেন।
৩. যাত্রী এবং রোলিং স্টক-এর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে RPF সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। ৮০০টি বৃষ্টিরক্ষা স্যুট ইতোমধ্যেই সুরক্ষা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
৪. ইলেকট্রিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল-টেলিকম সরঞ্জামের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫. অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও জলজটের ফলে ট্র্যাকে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। গত অর্থবছরে শিয়ালদহ ডিভিশনে এমন ৫৪টি ঘটনা ঘটেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার ও সঠিকভাবে পরিচালনা করা অগ্রাধিকার পাবে।
৬. ক্যানিং ও ডায়মন্ড হারবার-এর মতো ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকাগুলিতে বিশেষ নজরদারি থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত মনসুন পেট্রোলিং চালানো হবে।
৭. কাঁচড়াপাড়া, রানাঘাট, বহরমপুর, ব্যারাকপুরসহ বিভিন্ন রুটে ঝড়-বৃষ্টিতে ট্রেন চলাচল যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য গাছ কাটার কাজ জরুরি ভিত্তিতে চলছে।
৮. খারাপ আবহাওয়ার সময় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ওভারহেড ইকুইপমেন্ট (OHE)-এর রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাওয়ার ওয়াগন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
৯. জল চুঁইয়ে পড়া বা প্ল্যাটফর্মে জল জমে শর্ট সার্কিট বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০৪টি স্টেশনের ছাউনি সঠিক অবস্থায় রাখতে বলা হয়েছে।
১০. ১২৪টি লিমিটেড হাইট সাবওয়ে (LHS)-তে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পাম্পিং অ্যারেঞ্জমেন্ট নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবেদনশীল LHS এলাকায় সেন্সর-ভিত্তিক জলজট পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা বসানো হয়েছে।
১১. সোনারপুর, বারাসাত, বনগাঁ, রানাঘাট ও ব্যারাকপুর-এ রেইন গেজ বসানো হয়েছে, যাতে বৃষ্টির পরিমাণ মাপা যায় এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
১২. নামখানা, ডায়মন্ড হারবার, কৃষ্ণনগর, ব্যারাকপুর, বারাসাত-সহ ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অ্যানিমোমিটার বসানো হয়েছে, যাতে বাতাসের গতি ও অভিমুখ নির্ধারণ করে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত উদ্ধার পরিকল্পনা নেওয়া যায়।
ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাত্রী ও রেল ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সুসংগঠিত প্রস্তুতি এটা প্রমাণ করে যে, শিয়ালদহ ডিভিশনের যে কোন সংকট মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত। ডিআরএম রাজীব সাক্সেনার নেতৃত্বে পুরো ডিভিশন অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিকল্পিত ও কার্যকরী কর্মী মোতায়েনের মাধ্যমে আসন্ন বর্ষা মরসুমে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করছে।