• বালকের ফুসফুসে বোর্ডপিন, বের করে প্রাণরক্ষা মেডিক্যালে
    এই সময় | ২৮ মে ২০২৫
  • এই সময়: বাবা-মা প্রথমে ভেবেছিলেন, ঠান্ডা লেগে কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট। কেউ কল্পনাও করতে পারেননি, অসাবধানতায় গিলে ফেলা একটা বোর্ডপিন খাদ্যনালীর বদলে শ্বাসনালীতে ঢুকে সটান আটকে গিয়েছে বাঁ দিকের ফুসফুসে।

    বালকের বুক থেকে সেই ২.৫ সেন্টিমিটারের পিন বের করা হলো কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। বিরল ও মারাত্মক ঝুঁকির এই অস্ত্রোপচারে ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরা প্রাণ বাঁচালেন উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের ১২ বছরের অঙ্কন বিশ্বাসের।

    ক’দিন আগে বৃষ্টিতে প্রবল ভিজেছিল ওই বালক। সে জন্যেই ভয়াবহ কাশির দমককে ঠান্ডা লাগা বলে ভেবেছিলেন বাড়ির লোক। কিন্তু বসিরহাটে বুকের এক্স-রে করতে গিয়ে টেকনিশিয়ানের চক্ষুই ছানাবড়া হয়ে যায়— বাঁ দিকে ফুসফুসে আটকে যে আস্ত বোর্ডপিন!

    সেই পিন বের করতে গিয়ে মেডিক্যালের অভিজ্ঞ ইএনটি বিশেষজ্ঞদেরও মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। কারণ, সেই পিন ফুসফুসে এমন ভাবে গিঁথে ছিল যে বের করতে গেলেই খোঁচা লেগে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল ফুসফুস থেকে। অবশেষে সফল ব্রঙ্কোস্কোপি প্রসিডিয়োরে প্রাণরক্ষা হয়েছে অঙ্কনের।

    ছেলেটির বাবা গৌতম ও মা সাধনা জানান, গত ৩-৪ দিন ধরেই ছেলের বুকের বাঁ–দিকে ব‌্যাথা হচ্ছিল। সঙ্গে খুশখুশে কাশি আর মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট। শনিবার তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি ওষুধ দেন। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র লাভ হয়নি।

    সোমবার অঙ্কনকে নিয়ে যাওয়া হয় বসিরহাট সদর হাসপাতালে। সেখানেই বুকের এক্স–রে’তে ধরা পড়ে বোর্ডপিনের অস্তিত্ব। অবিলম্বে বালককে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিক‌্যাল কলেজে। মঙ্গলবার ভোরে অঙ্কনকে নিয়ে মেডিক‌্যালে পৌঁছন বাবা–মা।

    মেডিক্যালের ইএনটি বিভাগের শিক্ষক–চিকিৎসক দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অভিভাবকরা যখন হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তখন প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল ছেলেটির। সঙ্গে একটানা কাশি। আমরা দ্রুত সিটি স্ক্যান করি।

    সেখানে এক্স–রে’র চেয়েও অনেক স্পষ্ট দেখা যায়, বাঁ দিকের শ্বাসনালীতে ধাতব পিন ঢুকে।’ চিকিৎসকেরা জানান, কয়েক দিন ধরে পিনটি ঢুকে থাকায় ফুসফুসের স্বাভাবিক প্রসারণ–সঙ্কোচন ব্যাপক বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে বাঁ দিকের ফুসফুসটা প্রায় চুপসেই গিয়েছিল।

    ইএনটি বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন, দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। দীপ্তাংশুর পাশাপাশি ওই বিভাগের বিশেষজ্ঞ বিজন অধিকারী ও তনয়া পাঁজা এবং স্নাতকোত্তর পড়ুয়া (পিজিটি) শুভ্রজ্যোতি নস্কর মাঠে নেমে পড়েন।

    ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় নিপুণ দক্ষতায় রিজিড ব্রঙ্কোস্কপির মাধ‌্যমে বের করে আনা হয় ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা ওই বোর্ডপিন। শুভ্রজ্যোতি জানান, চরম সতর্কতা সত্ত্বেও পিনটি বের করার সময়ে একটা ছোট ক্ষত হয়েছে ফুসফুসে। আপাতত তাই অঙ্কনকে পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) রাখা হয়েছে। তবে কী ভাবে তার ফুসফুসে বোর্ড পিন গেল, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না গৌতম–সাধনা।

  • Link to this news (এই সময়)