• উদ্বোধনের আগে চিড় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল লুপ ব্রিজে!
    এই সময় | ২৮ মে ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার

    অদ্ভুত কারিগরি দক্ষতা। দেখলেই মনে হয় বিদেশের কোনও আধুনিক রাস্তা। সেই রাস্তার মধ্যেই রয়েছে অসামান্য এক লুপ সেতু। এই সেতুতে যে কোনও গাড়ি তিন পাকে ৩০০ মিটার উচ্চতার পাহাড়কে টপকে যাবে।

    পাহাড়ের মধ্যে এমন মসৃণ চওড়া রাস্তা দেশের মধ্যে বিরল। সে কথা দেশের সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী নীতিন গড়করি সমাজ মাধ্যমে একাধিক বার ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন। সমাজ মাধ্যমেও শেষ তিন মাসে এই লুপ পুল হয়ে উঠেছে চূড়ান্ত ট্রেন্ডিং বিষয়। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল।

    কিন্তু মুহূর্তেই যেন তাল কেটে গিয়েছে। ফাটল ফুটে উঠতে শুরু করেছে ওই সেতুতে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দ্বারা ‘ভারত মালা পরিযোজনা’ প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটির কাজ অনেকাংশে শেষ হয়ে গিয়েছে।

    তবে উদ্বোধন না হলেও সাধারণ যান চলাচলের জন্য এই রাস্তা তিন মাস ধরে খোলা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কালিম্পং জেলার ভিতর দিয়ে সিকিমের গ্যাংটক পর্যন্ত এই রাস্তা দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

    ভারতের সঙ্গে সিকিমের সংযুক্তির ৫০ বছর উপলক্ষে গ্যাংটকে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সিকিমকে উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে এই সড়কের উদ্বোধন করতে পারেন তিনি। কিন্তু তার আগেই এই সড়কের ফাটল চিন্তায় রেখেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। লুপ সেতুর পিচের আস্তরণে যেমন ফাটল দেখা দিয়েছে, তেমনি চুইখিম, বরবট এলাকায় সড়কের অনেক জায়গা ধসে যেতে শুরু করেছে।

    ওই এলাকা ধসপ্রবণ হলেও বেশ কিছু জায়গায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগও রয়েছে। সড়কটির একটি বড় এলাকা জিটিএ সদস্য তথা জিটিএ’র শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সঞ্জবীর সুব্বার এলাকার মধ্যে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই সড়ক নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহী, কিন্তু নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বত্র ভাল মানের কাজ হয়নি।’

    উদ্বোধনের আগেই যদি রাস্তার এই হাল হয় তা হলে কিছুদিনের মধ্যেই যখন বর্ষা ঢুকে পড়বে, তখন কী হবে? এ বার নির্ধারিত সময়ের আগেই উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকছে। এর পাশাপাশি উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পরে যখন নির্মাণকারী সংস্থাগুলি তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো উঠিয়ে নেবে, তখন সংস্কারের কাজে কতটা গতি থাকবে তা নিয়েও বাসিন্দাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।

    উল্লেখ্য, ভারত–চিন সীমান্তের ‘চিকেনস নেক’ করিডরে এই সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সেনাবাহিনীর ভারী যান চলাচলে এই সড়ক অত্যন্ত উপযোগী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই সড়কের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যে গুরুত্ব রয়েছে তা বিশ্লেষণ করে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ গণপথ খন্ডবহালে।

    তিনি বলেন, ‘এই সড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল করা কাম্য নয়, পিকনিকের মেজাজে এই এলাকায় যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁদের উপরে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ জারি করা যায়, সেটা আমরা চিন্তা করছি।’ কিন্তু এ সবের মধ্যেই সড়কে ফাটল চিন্তা বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসনের।

  • Link to this news (এই সময়)