সুন্দরবন এলাকায় হঠাৎ করেই বেড়েছে বাংলাদেশি জাহাজের আনাগোনা। সেই সঙ্গেই চিন্তা এবং উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রশাসনের আধিকারিকদের। বাংলাদেশি জাহাজ চলাচলের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সুন্দরবনের মানুষজন। পণ্য আমদানি-রপ্তানির নামে আসা জাহাজের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ বাড়বে বলেও আশঙ্কা তাঁদের। যদিও পুলিশের দাবি, ওই পথে যাতে কোনও জঙ্গি বা অনুপ্রবেশকারী আসতে না পারে সেই দিকে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই সড়কপথে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত রেখেছে ভারত সরকার। তবে পণ্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানির জন্য এখনও উন্মুক্ত রয়েছে জলপথ। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের জলপথ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সুন্দরবনের নদীপথ। আন্তর্জাতিক এই জলপথ ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি পন্যবাহী জাহাজ যাতায়াত করে। তবে, গত কয়েকদিনে সেই জাহাজ চলাচল অনেকটা বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এই কারণেই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তাঁরা। পাশাপাশি অতিরিক্ত জাহাজ চলাচলের কারণে নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি প্রশাসনের আধিকারিকদের।
এছাড়াও এই জাহাজ চলাচল বৃদ্ধির কারণে জল দূষণ থেকে শুরু করে জলজ প্রাণীদের মৃত্যু বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলছে বলেও দাবি তাঁদের। ইতিমধ্যেই এই জলপথে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
প্রমাদ গুনছেন বাসিন্দারা
আগেই এই নদী পথ ব্যবহার করে ভারতে চলে এসেছিল জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। সেই সঙ্গেই হয় অনুপ্রবেশও। এ বারও ওই পথ ব্যবহার করে অনুপ্রবেশকারী এবং জঙ্গিরা চলে আসবে কী না তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা।
তাঁরা জানান, বারে বারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে এদেশে। এই জন্য অন্যতম করিডোর হিসেবে সুন্দরবনকে ব্যবহার করেছে তারা। দালালদের হাত ধরে বাংলাদেশের খুলনা, বাখেরহাট-সহ একাধিক এলাকা থেকে এদেশে সম্প্রতি অনুপ্রবেশ ঘটেছে এদেশের সুন্দরবন এলাকায়।
গত ডিসেম্বর মাসে ক্যানিং থেকে তেহেরিক-উল-মুজাহিদিনের সদস্য, এক কাশ্মীরি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল বেঙ্গল এসটিএফ। সুন্দরবনের জলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে পালানোর ছক কষেছিল সেই জঙ্গি, এমনটাই দাবি ছিল গোয়েন্দা দফতরের।
বেড়েছে নজরদারিও
যদিও প্রশাসনের দাবি, পণ্য আমদানি-রপ্তানির জাহাজে কোনওভাবে সুন্দরবন এলাকায় অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকতে না পারে সেই দিকে নজর রাখছে পুলিশ এবং বিএসএফ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের উপাধক্ষ্য অনিমেষ মণ্ডল জানান, বাংলাদেশে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়া এবং পহেলগাম হামলার পরে এই এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পুলিশের আধিকারিকরাও জানিয়েছেন, সুন্দরবনের জলপথ ব্যবহার করে কোন জঙ্গি যাতে এদেশে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখছে পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্তারা। ওই জাহাজের মাধ্যমে যাতে অনুপ্রবেশ না হয় সেদিকেও নজর রাখছে উপকূল থানার পুলিশ বাহিনী। এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বিএফএফ-ও। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পর ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন জানিয়েছেন, তাঁরাও এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন।