• শতাধিক গাছ কেটে তৈরি হট মিক্সিং প্লান্ট, দমবন্ধ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের
    এই সময় | ২৮ মে ২০২৫
  • সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর

    যে কোনও শিল্পাঞ্চলের মোট আয়তনের ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ সবুজ থাকার কথা। অর্থাৎ গাছ থাকবে। এক সময়, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সবুজের পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ। জাতীয় সড়ক ও শহরের ভিতরে রাস্তা সম্প্রসারণ, বহুতল আবাসন তৈরির জন্য বহু গাছ কাটা হয়েছে।

    তার পরিবর্তে সমসংখ্যক বা তার বেশি গাছ লাগানো হয়নি। ফলে বর্তমানে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সবুজের পরিমাণ কমে হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। ফলে শহরের বাতাস ক্রমশ বিষাক্ত হচ্ছে।

    নতুন করে গাছ লাগিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা তো দূর, উল্টে শহরের ভিতরে কয়েকশো গাছ কেটে বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ তৈরির জন্য একটি হট মিক্সিং প্লান্ট বসানো হয়েছে। বিটুমিন গলানোর সময়ে ওই প্লান্টের কালো ধোঁয়া শিল্পনগরীর বাতাসকে আরও বিষাক্ত করে তুলছে।

    দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের পাশের একটি রাস্তা বেসরকারি আইকিউ সিটি হাসপাতালের দিকে চলে গিয়েছে। সম্প্রতি এই রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে মোহনবাগান সরণি। এই রাস্তার একধারে বনভূমি ও আর একধারে সিআরপিএফ ক্যাম্প রয়েছে।

    কয়েক মাস আগে এই বনভূমির শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, গাছ বড় হয়েছে তাই কেটে দেওয়া হচ্ছে। পরে ওই জমিতে আরও বেশি সংখ্যক গাছ লাগানো হবে। কিন্তু দেখা গেল, গাছ কাটার পরে ওই জমিতে একটি হট মিক্সিং প্লান্ট তৈরি করা হয়েছে।

    স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিষেক গড়াই বলেন, ‘ওই প্লান্ট থেকে যে পরিমাণ কালো ধোঁয়া বের হয়, তা ভয়াবহ। প্লান্ট সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে একাধিক স্কুলের বাচ্চারা যাতায়াত করে। কালো ধোঁয়ায় বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে।’

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে জমিতে প্লান্টটি তৈরি করা হয়েছে সেটি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (ডিএসপি) কর্তৃপক্ষের। তারাই ওই জমিতে একটি সংস্থাকে হট মিক্সিং প্লান্ট বসানোর অনুমতি দিয়েছে। ওই প্লান্টে তৈরি বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা তৈরির জন্য সরবরাহ করা হয়।

    গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করে কী ভাবে একটা দূষণ ছড়ানোর প্লান্ট তৈরি করা হলো? ডিএসপির নগর প্রশাসনিক ভবনের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অরূপ দত্ত চৌধুরী প্রথমে বলেন, ‘ওই জমিতে কোনও গাছ ছিল না। ওটা ফাঁকা জমি ছিল।’ পরে তিনি এই বিষয়ে তাঁর দপ্তরে এসে কথা বলতে বলেন।

    দুর্গাপুর শহরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার ও নানা কর্মসূচির আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা কবি ঘোষ বলেন, ‘মোহনবাগান সরণির ধারে ওই বনভূমিতে প্রচুর গাছ কেটে সেখানে হট মিক্সিং প্লান্ট বসানো হয়েছে। এই শহরের বাতাস এখন কার্যত বিষ। সিংহভাগ বাচ্চা ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট, পেটের রোগ সমেত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দূষণ ছড়াবে জেনেও কী ভাবে একটা হট মিক্সিং প্লান্ট স্থাপনের অনুমতি দিল ডিএসপি? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ করেছি আমরা।’

    দুর্গাপুরের এক বাসিন্দা তথা পরিবেশকর্মী শুধাজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ওই প্লান্ট থেকে কী পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে তা আমি দেখেছি। অবিলম্বে ওই প্লান্ট বন্ধ করা দরকার। না হলে শহরের মানুষ শ্বাস নিতে পারবে না।’

    এ দিকে, এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর শাখার আধিকারিকদের। দপ্তরের আধিকারিক অরূপ দে বলেন, ‘কোন জায়গায় এই প্লান্ট বসেছে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।’

  • Link to this news (এই সময়)