• সারপ্রাইজ় ভিজ়িটে শোকজ় ১৬ জনকে! ক্ষুব্ধ জেলাশাসক
    এই সময় | ২৮ মে ২০২৫
  • এই সময়, কোচবিহার: ‘১২টায় অফিস আসি, দুটোয় টিফিন.....আমি সরকারি কর্মচারী।’

    বহু বছর আগে নচিকেতা সরকারি কর্মীদের একাংশকে নিয়ে যে গান লিখেছিলেন, জমানা বদলের পরেও সেই কর্মসংস্কৃতি যে পুরোটা পাল্টায়নি তার প্রমাণ পেলেন কোচবিহারের জেলাশাসক।

    দুপুরবেলা সারপ্রাইজ় ভিজি়টে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন সরকারি দপ্তরে কেউ বই পড়ছেন, কেউ অন্য চেয়ারে পা তুলে ঘুমোচ্ছেন, কেউ আবার নাক ডাকছেন ঘড়ঘড় আওয়াজ করে। কাজে ফাঁকি দেওয়া এমন ১৬জন কর্মীকে সঙ্গে সঙ্গে শোকজ় করেন জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা।

    মঙ্গলবার দুপুরে ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১২টা। দোতলায় নিজের অফিসের ঠিক নীচে থাকা জেনারেল সেকশন, গেজেটেড সেল, এস্টাব্লিশমেন্ট সেকশন, মিড–ডে মিল ও হেলথ সেকশনে আচমকা একা একা ঢুকে পড়েন জেলাশাসক।

    অনেকদিন ধরে অভিযোগ আসছিল, তাঁর নিজের দপ্তরের কর্মীরাই ঠিক সময়ে আসছেন না। এলে কাজকর্ম না করে কাটিয়ে দিচ্ছেন। অথচ সরকারি নিয়ম বলছে, সকাল দশটায় এসে অন্তত বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মীদের থাকার কথা। এ দিন দুপুরে জেলাশাসক কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপচাপ নীচে নেমে আসেন।

    দেখতে পান, অফিসের বাবুরা অনেকেই তাঁদের টেবিলে নেই। হাতে গোনা যে ক’জন রয়েছেন, কেউ অফিসের কাজ নয়, হাতে গল্পের বই নিয়ে মন দিয়ে পড়ছেন। একজনকে দেখা যায় তিনি চেয়ারে শরীর এলিয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন! কয়েকজন না ঘুমোলেও ঘুরঘুর করছেন এ দিন থেকে ও দিক।

    প্রথম দিকে বিষয়টি বুঝতে পারেননি কেউই। কারণ, অনেকে ডিএমকে চেনেন না। একটু পরে হুঁশ হলে যে যেখানে ছিলেন দৌড়ে এসে চেয়ার টেনে হুমড়ি খেয়ে কোনওমতে কাজ শুরু করেন।

    কেউ আবার বই ফেলে দ্রুত হাতে তুলে নেন ফাইল। বকুনি খেয়ে চোখের পাতা খুলে সামনে জেলাশাসককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক অফিসার চমকে ওঠেন!

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি অফিসে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে প্রতি মাসে অন্তত দু’বার করে সারপ্রাইজ ভিজিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলাশাসক। মঙ্গলবার সেই কাজ শুরু করেছেন তিনি।

    তবে প্রথম দিনই নিজের দপ্তরে কর্মসংস্কৃতি চাঙ্গা করতে গিয়ে আধিকারিকদের খামখেয়ালিপনা দেখে বেজায় চটে যান জেলাশাসক। দুপুর ১২টায় অফিসের টেবিলে কাজের ব্যস্ততা যখন তুঙ্গে থাকার কথা, সে সময়ে অধিকাংশ কর্মীকে ইতিউতি ঘুরতে দেখে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।

    সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ফাঁকিবাজ কর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করছে প্রশাসন। পাশাপাশি এ দিন শৃঙ্খলা ভাঙার দায়ে শাস্তি হিসেবে ১৬ জনকে শোকজ় করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছেন, বাকিরা কেউ আপার ডিভিশন ক্লার্ক।

    এদিন সারপ্রাইজ় ভিজিটের পরে জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তরের মোট ১৬ জনকে শোকজ় করা হয়েছে৷ একদিনের মধ্যে তাঁদের সকলের কাছ থেকে জবাব তলব করা হয়েছে।’

    প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ সরকারি কর্মীদের সম্পর্কে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। জেলাবাসীর একংশের বক্তব্য,‘সামান্য কোনও কাজ করতে ওই সব দপ্তরে গেলে অকারণে হেনস্থা করা হতো। ফলে এই ধরনের আচমকা হানা দিলে সরকারি কর্মীদের ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমবে।’

  • Link to this news (এই সময়)