এই সময়, জলপাইগুড়ি: লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে চারজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো আক্রান্তরা প্রায় সকলের বয়সই চার বছরের নীচে। এদের মধ্যে দু’মাসের শিশুও আছে। আবার একবছর বয়সি এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি নিয়ে হাউজ হোল্ড সার্ভের কাজ এগিয়ে নিয়ে আসার পাশাপাশি মঙ্গলবার বিকেলে জেলাশাসকের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য দপ্তরকে নিয়ে বৈঠকে বসে জলপাইগুড়ি পুরসভা।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগামী কাল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা মারার তেল, ফগিংয়ের পাশাপাশি অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি জানান, কোভিডের সময় পুরসভা যে ভাবে কাজ করেছিল, এ বারও ঠিক একই ভাবে কাজ করা হবে। জেলাশাসক সামা পারভিন বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। তবে এ দিনের বৈঠকে ডেঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে বাড়ি বাড়ি সার্ভের কাজ ৯ জুনের পরিবর্তে এক সপ্তাহ এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।’
তিনি জানান যে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। জেলাশাসকের দাবি, গত বছরের এই সময় জেলাতে আক্রান্তের সংখ্যা যা ছিল তার থেকে এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কম।
জলপাইগুড়ি পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুসারে জানুয়ারি মাসে কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের ঘটনা ঘটেনি। তবে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে একজন করে আক্রান্ত হন। আবার এপ্রিল মাসে কোনও পজেটিভ কেস আসেনি। কিন্তু মে মাসের ১৮ তারিখ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে চারটি ঘটনা সামনে এসেছে।
১ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন করে দু’জন বাসিন্দা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে এই দু’জনের নাম এখনও পর্যন্ত সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হয়নি বলে জানান ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘সব থেকে উদ্বেগের বিষয় হলো, এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের একটা বড় অংশ শিশু। আবার আক্রান্তদের সকলেই প্রায় পুরসভার বস্তি এলাকার বাসিন্দা। আবার এদের কারও ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই। ফলে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ডেঙ্গি প্রতিরোধে এবার কোমর বেঁধে নামা হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট চিকিৎসক অভিষেক দে বলেন, ‘ডেঙ্গি হলো মশাবাহিত ভাইরাস রোগ। সুতরাং মশা কামড়ালে যে কোনও বয়সের পুরুষ-মহিলা বা শিশুর হতে পারে। পুরসভার যে সমস্ত এলাকায় এই রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সন্ধান মিলছে। সেই এলাকার পরিবেশ কী আছে, সেটা আগে দেখার প্রয়োজন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা রাখলে এই রোগের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।’
ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে স্প্রে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি মশা মারার তেল স্প্রে করবেন। এ ছাড়া কাউন্সিলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিনজন করে কর্মী নিয়োগ করতে, যাঁরা ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।
পুরকর্তাদের অভিযোগ, কিছু প্রমোটার তাঁদের নির্মীয়মাণ ভবনের সামনে ভারি স্ল্যাব বসাচ্ছেন, যা নিকাশি নালা সাফাই করতে গিয়ে পুরসভার কর্মীরা তুলতে পারছেন না। তাই সাফাই বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট প্রমোটারকে বলে ওই স্ল্যাব তুলে ফেলতে হবে। প্রমোটাররা সেই কাজ না করলে পুরসভা গিয়ে ওই স্ল্যাব ভেঙে দেবে।