এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারত কি পারবে হংকং-কে হারাতে? সোমবার নিউ টাউনে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের উৎকর্ষ কেন্দ্রে সন্তোষ ট্রফিজয়ী বাংলা দলের বিরুদ্ধে কোনও মতে মনবীর সিংহেরা ২-১ জিতলেও প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
শিলংয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত খেলতেই পারেনি। প্রথম গোলের সুযোগ সুনীলরা তৈরি করেছিলেন ম্যাচের ৩০ মিনিটে। ০-০ ড্রয়ের পরে কোচ মানোলো মার্কেস বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘ভাগ্য ভাল গোল খাইনি।’’ তিন মাস পরেও ছবিটা বদলায়নি। অথচ জাতীয় শিবির শুরু হওয়ার পর থেকেই অধিনায়ক সুনীল থেকে শুভাশিস বসু— প্রত্যেকেই বলছেন, বাংলাদেশের ম্যাচে ভুলের পুনরাবৃত্তি না করাই একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা সম্পূর্ণ বিপরীত। মাত্র তিন দিন অনুশীলন করে ম্যাচ খেলতে নামা রবি হাঁসদা, নরহরি শ্রেষ্ঠদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের খেলায় সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারলেন না ব্রেন্ডন ফার্নান্দেসরা। এই কারণেই কি বাড়তি সতর্কতা ভারতীয় শিবিরে? ম্যাচ যাতে কেউ দেখতে না পান তার জন্য লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাস নিয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী পাহারা দিচ্ছিল। তবুও বেআব্রু হয়ে গেল ভারতীয় দলের বেহাল অবস্থা।
বাংলার বিরুদ্ধে প্রস্ততি ম্যাচে সুনীলকে বাদ দিয়ে মানোলো প্রথম একাদশ গড়েছিলেন। প্রথমার্ধে ১-০ করেন ব্রেন্ডন। কিন্তু স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভারতের বিরুদ্ধে সমতা ফেরান ইসরাফিল দেওয়ান। শেষ পর্যন্ত মান বাঁচালেন আশিক কুরুনিয়ন। তাই জিতলেও মানোলোর মুখে উদ্বেগের ছায়া।
মাত্র তিন দিন অনুশীলন করা বাংলার বিরুদ্ধে কেন এ রকম বেহাল দশা ভারতীয় দলের? ম্যাচের পরে বাংলাকে সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘ভারতীয় দলকে দু’টো গোলই আমরা উপহার দিয়েছি। পুরো ম্যাচে ওরা গোলের সুযোগ পায়নি। আমরা পাঁচটা কর্নার আদায় করে নিয়েছিলাম। ভারতীয় দল পেয়েছিল দু’টো। ফ্রি-কিক পেয়েছিল মাত্র একটি।’’ এর পরেই সতর্ক সঞ্জয় যোগ করলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ভারতীয় দলকে সাহায্য করা। শিবিরে কড়া অনুশীলন হয়। কিছু ফুটবলার সমস্যায় পড়ে প্রস্তুতি ম্যাচে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে তা হয় না। তা ছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচে কোচেরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। মানোলোই বলতে পারবেন তিনি কী ভাবনা-চিন্তা করেছিলেন আমাদের বিরুদ্ধে দল গড়ার ক্ষেত্রে।’’
ভারতীয় দলের খেলায় হতাশ হলেও সঞ্জয় উচ্ছ্বসিত রবিদের নিয়ে। বললেন, ‘‘মাত্র তিন দিন অনুশীলন করে খেলতে নেমেছিলাম। আইএফএ সচিব যখন জানিয়েছিলেন, ভারতীয় দল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চায়, আমি কিছুটা দ্বিধার মধ্যে ছিলাম। কারণ, ছেলেরা কী অবস্থায় রয়েছে জানি না। তবে ওরা দারুণ উৎসাহিত ছিল খেলার জন্য। ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মুখিয়ে ছিল। সকলেই দুর্দান্ত খেলেছে।’’
উচ্ছ্বসিত বাংলার একমাত্র গোলদাতা ইসরাফিলও। বললেন, ‘‘ভারতের সেরা ফুটবলাররা রয়েছে জাতীয় দলে। ওদের বিরুদ্ধে গোল করতে পেরে দারুণ আনন্দ হচ্ছে। আমরা কতটা উন্নতি করতে পেরেছি তা প্রমাণ করার লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নেমেছিলাম।’’ ইসরাফিল আপ্লুত সুনীলের পরামর্শ পেয়ে। কী বললেন ভারত অধিনায়ক? ইসরাফিলের কথায়, ‘‘সুনীলদা আমাকে উজ্জীবিত করেছেন ভাল খেলার জন্য। অনেক দিন ধরেই ইচ্ছে ছিল ওঁর সঙ্গে একটা ছবি তোলার। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে সকলকে দেখাতে পারব।’’
ফিফা ক্রমতালিকায় সুনীলরা রয়েছে ১২৭তম স্থানে। হংকং রয়েছে ১৫৩ নম্বরে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৩০ জুন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে খেলবে হংকং। অথচ ভারতীয় দল সোমবার প্রস্তুতি ম্যাচ খেলল বাংলার বিরুদ্ধে। আজ, মঙ্গলবার প্রতিপক্ষ উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা দল!