• পহেলগাম ও মুর্শিদাবাদ-অস্ত্রে বিধানসভার জন্য তৈরি দুই শিবির
    আনন্দবাজার | ২৭ মে ২০২৫
  • পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার ভূমিকার প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে প্রস্তাব আসছে রাজ্য বিধানসভায়। আগামী ৯ জুন শুরু হতে চলা অধিবেশনে এই প্রস্তাব আনবেন বলে জানিয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে, এই অধিবেশনেই মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে আলাদা আলোচনা চেয়ে চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপি।

    ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়ে গিয়েছে। সারা দেশের মতোই এ রাজ্যে সেনাবাহিনীর বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ রাজ্যের জেলায় জেলায় ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ করেছে বিজেপি। রাজ্যব্যাপী মিছিল, সভা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। ‘সেনা সম্মানে’ কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য কংগ্রেসও। এই পরিস্থিতির আঁচ বিধানসভার অধিবেশনেও পড়তে চলেছে। সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতপার্থক্য না থাকলেও পহেলগামের নিরাপত্তা, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা এবং ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ-বিরতি পর্যন্ত একাধিক প্রশ্নে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে নানা ফারাক আগেই সামনে এসেছে। এই অবস্থায় অধিবেশনে স্পিকারের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

    বিধানসভার অধিবেশনে অবশ্য মুর্শিদাবাদ নিয়ে আলাদা আলোচনা চাইছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। পহেলগাম হামলা ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি করার পরই পাল্টা এই দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ইতিমধ্যেই বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে হিন্দু-বিরোধী অশান্তি নিয়ে বিধানসভায় কেন আলোচনা করবেন না? কলকাতা হাই কোর্টের নিযুক্ত তিন সদস্যের কমিটির রিপোর্টে ধরা পড়েছে, মুর্শিদাবাদের হিংসায় তৃণমূলের নেতাদের কী ভূমিকা ছিল! কেন আক্রান্তদের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ যায়নি, কেন বেছে বেছে বাড়ি নিশানা করা হয়েছে, কমিটির রিপোর্টে যেমন বলা হয়েছে, সেই কাণ্ড কেন তৃণমূলের নেতারা ঘটিয়েছেন— এ সব প্রশ্নের উত্তর বাংলার মানুষ জানতে চান।’’ বিরোধী দলনেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিধানসভা খুললে তাঁরা এই সব প্রশ্নে সরব হবেন।

    তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে চাইছেন। তার সঙ্গে তৃণমূলের অবস্থান মেলে না। আমরা জাতীয় স্বার্থে সরকার ও সেনার পাশে আছি।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘মুর্শিদাবাদে অশান্তির পিছনে বড় ষড়যন্ত্র ছিল। পুলিশ তা নিয়ে তদন্ত করছে।’’

    মুর্শিদাবাদের কয়েকটি জায়গায় হিংসা, লুটপাট, খুন ও ঘরছাড়া হওয়ার ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছিল বিরোধীরা। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ ছিল, শাসক তৃণমূলের মদতেই একাধিক জায়গায় হিন্দুদের উপরে আক্রমণ হয়েছে। পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধেই অশান্তি তৈরির চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ফলে, পহেলগামের ঘটনা তো আছেই, সেই সঙ্গে মুর্শিদাবাদে ওই হিংসার ঘটনা নিয়েও উত্তপ্ত হতে পারে বিধানসভার আসন্ন অধিবেশন। জঙ্গি-হামলা ও সংঘর্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। সংঘর্ষ-বিরতির পরে দল ও সরকারের একাধিক সমাবেশে বিষয়টিকে সামনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে এ রাজ্যের শুভেন্দু, সুকান্ত মজুমদারেরা। একই ভাবে এই নিয়ে কেন্দ্র যে সংসদীয় প্রতিনিধিদল বিদেশে পাঠিয়েছে, তার সদস্য হিসেবে প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভার বাইরের এই তৎপরতার ছায়া পড়তে চলেছে ভিতরেও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)