• মহমেডানের নজরুল-স্মরণ, ইতিহাসের খোঁজ
    আনন্দবাজার | ২৭ মে ২০২৫
  • ময়দানে নতুন সাজের ক্লাব তাঁবুতে জ্বলজ্বল করছে স্বর্ণযুগের তারকাদের ছবি। পাশেই ফ্রেম-বন্দি ক্লাবের দিগ্বিজয়ে মুগ্ধ এক বিশিষ্ট ফুটবল ভক্তের কবিতা-কুর্নিশ! ‘এই ভারতের অবনত শিরে তোমরা পরালে তাজ, সুযোগ পাইলে শক্তিতে মোরা অজেয় দেখালে আজ’!

    ১৯৩৪ সালে বাঘা ব্রিটিশ প্রতিপক্ষদের হারিয়ে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে লিগ জেতে মহমেডান স্পোর্টিং। সেই ঐতিহাসিক জয়ে অভিনন্দন জানিয়েই আবেগ ভরা কবিতাটি লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। সোমবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ‘বিদ্রোহী-কবি’র ১২৬ বছরের জন্মদিনে সেই কবিতার স্মারকটিই মহমেডানের ক্লাব ঘরে সাদরে আপন করে নেওয়া হল। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট মহম্মদ কামারুদ্দিন বলছিলেন, “মহমেডানকে নিয়ে নজরুলের এমন কবিতা আজকের ক্লাব কর্তারা অনেকেই জানতেন না। এটা তো বাংলার সংস্কৃতিতে যুগ যুগ ধরে মহামেডানের মিশে থাকারও স্মারক।”

    নজরুল ইসলামের জন্মদিনে এমন অভিনব উদ্‌যাপনও সচরাচর দেখা যায় না। শতাব্দী-প্রাচীন মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ইতিহাস-মাখা সুসজ্জিত তাঁবুতে যা দেখা গেল। নজরুলের রচনাবলিতে ‘মোবারকবাদ’ নামে মহমেডান-বন্দনার কবিতাটির বিষয়ে ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারপার্সন আহমেদ হাসান ইমরানকে প্রথম জানান ছায়ানট (কলকাতা) সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

    বয়সে কবির থেকে বছর আটেকের বড় মহমেডান স্পোর্টিং। ফুটবল-পাগল নজরুল অবশ্য মোহনবাগানেরও কম ভক্ত ছিলেন না। হাতে পয়সা থাকলে ট্যাক্সি হাঁকিয়ে ময়দানে ফুটবল দেখে ট্যাক্সিতে ফেরার বিলাসিতাটুকু ছাড়তেন না তিনি। ১৯১১-য় খালি পায়ে মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের পরে ১৯৩৪-এর মহমেডানের লিগ জয়ের উপনিবেশ-বিরোধী স্পর্ধার ঐতিহাসিক গুরুত্বও কবি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন। অবিভক্ত ভারতের নানা প্রান্তের ১১ জন মুসলিম ফুটবলারকে নিয়ে মহমেডানের সেই জয়ে নজরুল একই সঙ্গে সমাজের গরিব, অভাজনের স্বপ্নপূরণ এবং একযোগে হিন্দু, মুসলিমের মর্যাদা রক্ষার চিহ্ন দেখেছিলেন। কবিতায় লেখেনও, ‘হিন্দু, মুসলমানের তোমরা ভারতে রেখেছ মান / শক্তি যাহার দেখেছে মানুষ, তাহারেই দেয় প্রাণ’! ১৯৩৪-৩৮ টানা পাঁচ বার লিগ জিতে মহমেডান ভারতীয় ফুটবলের এক অনন্য শৃঙ্গ জয়ের নজির গড়ে।

    মহমেডান কর্তা কামরুদ্দিন বলছিলেন, “মহমেডান সমর্থকেরা সারা ভারতে ছড়িয়ে রয়েছেন। আবার কলকাতার অমুসলিমদের মধ্যেও অনেকে মহমেডান সমর্থক। কিন্তু আমরা নিজেদের বাংলার ফুটবল দল পরিচয়টাও কখনও ভুলিনি। তাই নজরুলের সঙ্গে ক্লাবের ইতিহাস স্মরণের এই অনুষ্ঠান। পরে ক্লাবে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও করার ইচ্ছে রয়েছে।” ছায়ানটের সোমঋতাদের গানে, কবিতায় নজরুল-স্মরণের এ দিন সাক্ষী থাকলেন মহমেডানের কর্তারা। তাঁবুতে এ দেশের ফুটবল-কিংবদন্তি প্রথম বার ইউরোপে খেলা মেটিয়াবুরুজের মহম্মদ সালিম বা গোলমেশিন সামাদদের ছবির পাশেই থেকে গেল নজরুলের কবিতাও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)