• শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠকেও রইল প্রশ্ন, নিরাশ চাকরিহারা
    আনন্দবাজার | ২৭ মে ২০২৫
  • রাজ্যের শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমারের সঙ্গে বৈঠকের পরেও জট কাটল না। সোমবার বিকাশ ভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে চাকরিহারারা জানালেন, তাঁরা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাননি। তাই তাঁঁরা খুবই আশাহত।

    এ দিন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর প্রতিনিধিরা বিকাশ ভবনে শিক্ষাসচিবের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে বেরিয়ে এসে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধি বৃন্দাবন ঘোষ বললেন, “শিক্ষাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। কিন্তু বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর আমরা এখনও পাইনি। আমরা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অথবা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসতে চাই। আমরা যে কতটা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি, তা গোটা ভারতবর্ষকে জানাতে চাই। তাই আমাদের আন্দোলন কলকাতায় সীমাবদ্ধ না রেখে দিল্লিমুখী করব। তবে, বিকাশ ভবনের সামনে যে আন্দোলন চলছে, সেটা চলবে।” সেই সঙ্গেই বৃন্দাবন জানান, ফের পরীক্ষা যে তাঁরা দেবেন না, এ দিন আবারও তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সরকারকেই যা পদক্ষেপ করার, করতে হবে। বৃন্দাবন বলেন, “সরকার যে রিভিউ পিটিশন করেছে, তা যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, তার জন্য যা যা পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে, তাতে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। রিভিউ পিটিশন গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টায় খামতি আছে।”

    চাকরিহারা শিক্ষক রাকেশ আলম বললেন, “নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ৩১ মে-র মধ্যে জারি করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি, রিভিউ পিটিশন গৃহীত হওয়ার আগে পর্যন্ত নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঠেকিয়ে রাখতে। কিন্তু শিক্ষাসচিব জানিয়েছেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে বাধ্য। ফলে, আমাদের নতুন করে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবি পূরণ হল না।”

    চাকরিহারা এক শিক্ষক হাবিবুল্লা বললেন, “শিক্ষাসচিব জানিয়েছেন, তাঁরা আইনি পথে যত দূর সম্ভব যাবেন। আমরা তাঁর কথায় কিছুটা সন্তুষ্ট, কারণ আইনি পথে লড়ার জন্য সরকারের যতটা তৎপর হওয়া উচিত, ততটা তৎপর তারা হচ্ছে না বলেই মনে হয়।” আর এক চাকরিহারা শিক্ষক অমিতরঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, আজকের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা আশাহত হয়েছি। কারণ, আমাদের যে প্রশ্ন, তার উত্তর একমাত্র শিক্ষামন্ত্রীর কাছেই রয়েছে। ফলে, অনেক প্রশ্নের উত্তরই আমরা পেলাম না। আমরা চাই, ভবিষ্যতে শিক্ষামন্ত্রী যেন আমাদের সঙ্গে বসেন।”

    এ দিন বিকাশ ভবনের এক কর্তা দাবি করেছেন, চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকটি সদর্থক হয়েছে। এ দিন অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

    হাই কোর্টের নির্দেশে বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তা ছেড়ে নতুন জায়গায় যাওয়ার প্রসঙ্গে বৃন্দাবন জানালেন, নতুন জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। যে ছাউনি তৈরি করা হয়েছে, তাতে বৃষ্টি আটকাবে না। বৃন্দাবন বলেন, “আমরা বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে কোনও মতে সার্ভিস রোডের একধারে বসে আছি। নতুন জায়গায় ঠিকঠাক ছাউনি তৈরি হয়ে গেলেই আমরা চলে যাব। আমরা সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করছি। কিন্তু সরকারের তরফে সেই সহযোগিতা পাচ্ছি না।” এ দিন বৃন্দাবন জানান, তাঁদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ মেহবুব মণ্ডল অসুস্থ। তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

    ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর পরে শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করে আরও একটি চাকরিহারা শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আনটেন্টেড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’। বৈঠকের পরে বেরিয়ে এসে ওই সংগঠনের তরফে মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, “আমরা আশা রাখছি, সরকার যে রিভিউ পিটিশন করছে, তা গ্রহণ করা হবে।” মৃন্ময়ের প্রশ্ন, যে সমস্ত ক্ষেত্রে আইন ভাঙা হয়েছে, তা চিহ্নিত হয়েছে। তা হলে আইনি পথে কেন তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন না?

    মৃন্ময় জানান, নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির প্রমাণ নেই। তবে মৃন্ময় বলেন, “আমরা এখনই কোনও আন্দোলনের পথে যাচ্ছি না। আমরা আইনি পথে লড়ব।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)