সাতসকালে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় বেদম মার খেয়েছে সে। যাঁরা মেরেছেন, তাঁদের সে চেনে না। এ দিকে, চৌর্যের যে উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়েছিল, তা-ও সফল হয়নি। এর পরে চুরির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় ক্ষোভে, দুঃখে গণপিটুনিতে যুক্তদের বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করল এক চোর। সেই অভিযোগপত্রে সে লিখেছে, ‘চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার পরে যারা আমাকে মারধর করেছে, তাদের আমি চিনি না। মহাশয়ের নিকট আমার আবেদন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বাধিত থাকব।’
পুলিশ সূত্রের খবর, নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা, বছর আটত্রিশের ওই যুবক রবিবার সকাল-সকাল বেরিয়েছিল চুরি করতে। পাটুলি থানা এলাকার বৈষ্ণবঘাটার নতুনপাড়ার একটি বাড়িতে ঢুকেও পড়েছিল।কিন্তু চুরি সেরে সময় মতো চম্পট দেওয়ার আগেই ধরা পড়ে যায় গৃহস্থের হাতে। এর পরে যা ঘটার, তা-ই ঘটে। রীতিমতো লোকজন ডেকে এনে উত্তম-মধ্যমদেওয়া হয় তাকে। যদিও ওই গণপিটুনির মধ্যেই কোনও মতে পালিয়ে যায় ওই যুবক। এর পরে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয় এবং শেষমেশ সে দিনই কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে সে ধরা পড়ে।
সে যে চুরির উদ্দেশ্যেই সে দিন ওই বাড়িতে হানা দিয়েছিল, পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে রাখঢাক না-করেই তা সরল ভাবে স্বীকার করে নিয়েছে ওই যুবক। চুরির ‘কাজ’ শেষ করার আগেই যে সেধরা পড়ে যায়, তা-ও জানিয়েছে পুলিশকে। পুলিশও অবশ্য তার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে গণপিটুনিতে যুক্তদের নামে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সাতসকালে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে ব্যাগ-সহ নগদ টাকা হাতানোর সময়ে বাড়ির লোকজনের হাতে ধরা পড়ে যায় ওই যুবক। জোটে যথেচ্ছ কিল-চড়-ঘুষি। যদিও সেইমারধরের মধ্যেই কোনও মতে পালায় সে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সে দিন দুপুরেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় অভিযুক্ত চোর। তার পরেই গণপিটুনির বিচার চেয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে সে। নিজের অভিযোগপত্রে ওই যুবক জানিয়েছে, গণপিটুনিতে জখম হওয়ায় বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। সেই নথিও জমা দিয়েছে সে। তবে, যাঁরা তাকে মারধর করেছিলেন,তাঁদের সে চেনে না বলে জানিয়েছে। এমনকি, তাকে মারধর করা হলেও সে যে কিছুই চুরি করতে পারেনি, পুলিশের কাছে সে কথাও স্বীকার করেছে ওই যুবক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে বাড়িতে ওই যুবক চুরি করতে গিয়েছিল, সেই পরিবারের তরফে রবিবার দুপুরে অরুন্ধতী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মহিলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুল তোলার সময়েই তিনি অভিযুক্তকে ঘরের ভিতরে চুরি করতে দেখেন বলে জানিয়েছেন। প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে মহিলা ওই চোরকে ধরে ফেলেন বলে লিখিত অভিযোগে তাঁর দাবি।ঘটনার পর থেকে গোটা পরিবার আতঙ্কে রয়েছে বলেও পুলিশকে জানান ওই মহিলা।
গৃহস্থের দায়ের করা মামলা রুজু করার পাশাপাশি অভিযুক্ত চোরের দায়ের করা মারধরের ঘটনাতেও মামলা দায়ের করেছে পাটুলি থানা। ওই থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অভিযোগ এলে তো আমাদের মামলা রুজু করতেই হবে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। দু’টি অভিযোগেরই তদন্ত করে দেখা হবে।’’