• এইসময় খবরের জের: মিলবে জন্ম শংসাপত্র, আধার, সঙ্গে রেশনও
    এই সময় | ২৭ মে ২০২৫
  • প্রশান্ত পাল, পুরুলিয়া

    গ্রামে কাজের অভাবে রোজগার তলানিতে। দু’বেলা পেট ভরে খেতে না–পাওয়ায় শরীরে বাসা বাঁধছে রোগ। মৃত্যু হচ্ছে অসময়ে। এতটাই ভয়বাহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন জঙ্গলমহলের ব্লক বলরামপুরের হাড়জোড়া গ্রামের শবর সম্প্রদায় মানুষ।

    ধারাবাহিক ভাবে তাঁদের খবর প্রকাশিত হয় ‘এই সময়’–এ। যার পড়েই নড়েচড়ে বসেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন ও বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকেরা ইতিমধ্যে গ্রামে গিয়ে সরজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন।

    গ্রামের শবর টোলায় ৩২টি শবর পরিবারের ১৪১ জনের বাস। তাঁদের মধ্যে কারও রেশন কার্ড নেই, কারও আবার রেশন কার্ড থাকলেও আধার কার্ডের সঙ্গে তার সংযোগ না–থাকার কারণে রেশনপণ্য পাচ্ছেন না। গ্রামে কার আধার কার্ড নেই, তার খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।

    সোমবার বলরামপুর ব্লক প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ না থাকলেও বিশেষ সহায়তা হিসেবে এঁদের রেশনপণ্য দেওয়া হবে।

    বলরামপুর ব্লক খাদ্য পরিদর্শক দেবব্রত রায় বলেন, ‘এই টোলার বাসিন্দাদের পিভিটিজি–র (পার্টিকুলারলি ভালনারেব​্ল ট্রাইবাল গ্রুপ) আওতায় রাখা হয়েছে। যাঁরা রেশনপণ্য পাচ্ছেন না তাঁদের চলতি মাস থেকেই রেশন দেওয়া শুরু হয়েছে এবং এটি চালু থাকবে।’

    জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘শবরদের মধ্যে যাঁদের জন্ম শংসাপত্র নেই, আধার কার্ড বা রেশন কার্ড নেই, তা সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও–দের দেখতে বলা হয়েছে।’

    বলরামপুরের বিডিও সৌগত চৌধুরী জানান, যাঁদের আধার কার্ড নেই তাঁদের আধার কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘আধার কার্ডের জন্য জন্ম শংসাপত্রের প্রয়োজন।

    যাঁদের জন্ম শংসাপত্র নেই, প্রথমে তাঁদের ডিলেইড জন্ম শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়া হবে। সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’ যদিও পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া-শবর কল্যাণ সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিতের প্রশ্ন, ‘জন্ম শংসাপত্রের জন্য আদালতের হলফনামা দরকার। হলফনামা করতে আদালতে এসে ন্যূনতম ৫০০ টাকা খরচ। তার পর যাতায়াতেরও খরচ রয়েছে। শবরেরা কোথায় সেই অর্থ পাবে?’

    শুধু এই গ্রামেই নয়, জেলার অন্যত্রও শবরদের মধ্যে অনেকেরই আধার কার্ড, রেশন কার্ড, জন্মের শংসাপত্র নেই। যে কারণে শবরেরা সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত বলে জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া-শবর কল্যাণ সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত।

    তাঁর দাবি, ‘শবরদের অনেকেই পূবে খাটতে যায়, অনেকেই এখনও বনে–জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। যখন আধার কার্ড তৈরি হয়েছিল, তাদের অনেকে সে সময় গ্রামেই ছিল না। ফলে কার্ড তৈরি থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে। কোন শংসাপত্র কতজনের নেই, ব্লক ধরে ধরে আমরা সেই তালিকা প্রশাসনকে দিয়েছি। সম্প্রতি রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তর থেকেও সেই তালিকা আমাদের কাছে চাওয়া হয়েছে। আমরা মেল করে সেই তথ্যই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে পাঠিয়েছি।’

  • Link to this news (এই সময়)