• কাকদ্বীপে অনুপ্রবেশকারী কলোনি? কী ভাবে ভোটার তালিকায় নাম ডাককর্মীর
    এই সময় | ২৭ মে ২০২৫
  • এই সময়, কাকদ্বীপ: কাকদ্বীপে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগে এ বার উঠে এল কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগের কর্মচারীর নাম। প্রশাসন সূত্রের খবর, অভিযুক্ত কাকদ্বীপের প্রতাপাদিত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ গোবিন্দরামপুরের বাসিন্দা বত্রিশ বছরের সৈকত দাস।

    তিনি নামখানার পোস্ট অফিসের কর্মচারী। আদতে বাংলাদেশি সৈকত কী ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি পেলেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।

    বাবা-মায়ের আগে ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে সৈকতের। সৈকতের পর ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে মা রেবারানি দাসেরও। কিন্তু বাবা সহদেব দাসের নাম আজও ভোটার তালিকায় ওঠেনি। সৈকতের জন্মের শংসাপত্র নেই।

    সৈকতের বাবা এখনও নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন বলে প্রতিবেশীদের দাবি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে কাকদ্বীপ বিধানসভার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও প্রতাপাদিত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েত–সহ আশেপাশের এলাকায় গত দু’বছরে প্রায় ছয় হাজারের বেশি ভোটার বৃদ্ধি পাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে একে একে প্রকাশ্যে আসতে চলেছে এ দেশের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি ভোটারদের নাম।

    প্রশাসনের সমীক্ষায় এ ভাবে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসতে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। এ দিন বিকেলে নামখানা পোস্ট অফিসে গিয়ে সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অশান্তির হাত থেকে বাঁচতে বহু বছর আগে বাবা এবং মায়ের পূর্বপুরুষেরা চলে এসেছিল। আমার জন্ম এখানেই। পড়াশোনাও এখানেই। তাই আত্মীয়দের মাধ্যমে আঠেরো বছর বয়সের পর ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করে ভোটার কার্ড পেয়েছি।’

    ভোটার তালিকায় বাবা এবং মায়ের নাম না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ছেলে সৈকতের নাম ভোটার তালিকায় উঠল? তা হলে কি কাকদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরার অভিযোগটাই সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে?

    অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে দুষ্টচক্রের মাধ্যমে একাংশ অসাধু প্রশাসনিক আধিকারিকদের সাহায্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন পোস্ট অফিসের কর্মচারী সৈকত। অভিযোগ অস্বীকার করলেও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

    দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামে তাঁর বাড়িতে গিয়ে মা রেবারানি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কাকদ্বীপ অসংখ্য বাংলাদেশি পরিবার থাকে। ওই সমস্ত বাংলাদেশিদের অনেকেরই ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে।

    কারও কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কেন আমার এবং আমার ছেলের নাম ভোটার তালিকায় ওঠার পর থেকে এই সমস্যা হচ্ছে?’ তাঁদের প্রতিবেশী বৃদ্ধা স্নেহবালা দাস বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসার পর ওদের আমি জায়গা বিক্রি করেছিলাম। সহদেব দাস বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেন বলে শুনেছি। বছরখানেক আগে বাংলাদেশ থেকে সহদেব এখানে এসেছেন।’

    জানা গিয়েছে, সৈকত একা নয়, এই এলাকায় হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে তাদের সূত্রে আরও বাংলাদেশি আসছে এ দেশে। সৈকতের আর এক প্রতিবেশী সুভাষ দাস বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর আমার পূর্বপুরুষরা কাকদ্বীপে চলে এসেছিল। এতদিন এখানে বসবাস করার পরে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পরিষেবা পেতে শুরু করেছি। কিন্তু ভোটার কার্ড আমরা পাচ্ছি না। অথচ আমাদের রেশন কার্ড, আধার কার্ড ও প্যান কার্ড রয়েছে।’

    নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে মৎস্যজীবী ট্রলারে চেপে সুন্দরবনের ভারত–বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশিরা এ রাজ্যে ঢুকে পড়ছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ। অনেকেই কাকদ্বীপ ও নামখানায় জলাজমি কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করে ফেলছে। ফলে একের পর এক বেনামী গ্রাম এবং কলোনি তৈরি হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের হাতে তথ্য উঠে এসেছে।

  • Link to this news (এই সময়)