• শুভঙ্কর কোথায়? দুই অফিসারের ভিন্ন বয়ান
    এই সময় | ২৭ মে ২০২৫
  • এই সময়, পাঁশকুড়া: থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় অধরা অন্যতম অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিত। তিনি কোথায় জানতে চাইলে, মামলার তদন্তকারী অফিসার ও পাঁশকুড়া থানার আইসি–র দু’রকম বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে মৃত ছাত্রের পরিবার।

    মামলার তদন্তকারী অফিসার সুকুমার টুডু সোমবার মৃত ছাত্রের বাড়িতে যান। আগামী ২ জুন ওই ছাত্রের মাকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার নোটিস দেন তিনি। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সংগ্রহ করেন পরিবারের সদস্যদের থেকে।

    এরপর তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলেন। অভিযুক্তের দোকান যে বাজার এলাকায়, সেখানেও যায় পুলিশ। সুকুমার বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত পলাতক। তবে তাঁর পরিবারের লোকজন বাড়িতে রয়েছেন।’

    তিনি ‘পলাতক’ বলে উল্লেখ করলেও রবিবার পাঁশকুড়া থানার আইসি দাবি করেছিলেন, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ডিউটি করছেন। এ দিন মৃত ছাত্রের পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘ডিউটিতে থাকা একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তিনি পালিয়ে যান কী ভাবে?’

    পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মৃত ছাত্রের মা বলেন, ‘জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তকে পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করল না। পুলিশ অভিযুক্তকে আড়াল করতে চাইছে।’ তবে এ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি পাঁশকুড়া থানার আইসি সমর দে।

    এ দিন সকালে সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল মৃত ছাত্রের বাড়িতে যায়। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন দলের সদস্যরা। বিকেলে স্থানীয় বাজারে মোমবাতি মিছিল ও পথসভা করে বিজেপিও। পরে বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা মৃত ছাত্রের বাড়িতে যান।

    কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকা বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো অভিযোগে মামলা দায়ের হলো। অথচ পুলিশ এখনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল না।

    পাঁশকুড়া থানার পুলিশ অভিযুক্তকে আড়াল করছে। আমরা অভিযুক্তের গ্রেপ্তারির অপেক্ষায় আছি। যতদিন না অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হচ্ছে, তত দিন আমাদের আন্দোলন চলবে। পুলিশ যদি শুভঙ্করকে গ্রেপ্তার না করে, আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’ আজ, মঙ্গলবার, বিজেপি বিধায়কদের একটি দল মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন বলে গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

    অন্য দিকে, এই ঘটনায় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, আরও একটি নাম। শ্যামচরণ ভুঁইয়া নামে ওই ব্যক্তি এলাকায় জামাই বলেই পরিচিত। পাড়ার লোকেরা জানিয়েছেন, কথা কানাকানি করা তার স্বভাব। সে দিন ছাত্রটিকে বকা–ঝকা করে শুভঙ্কর চলে যেতেই ‘মাতব্বরি’ করতে এগিয়ে আসে সে। বালকটিকে দাঁড় করিয়ে ‘চুরি করেছিস’ বলে বেশ খানিকটা বকা–ঝকা করে।

    শুভঙ্করের স্ত্রী নিশার দাবি, ওই ব্যক্তিই যেচে বালকের বাড়িতে গিয়ে তাকে চোর অপবাদ দেয়। সে–ই বালক ও তার মাকে দোকানে ডেকে আনে। এলাকাবাসীর মতে, আত্মহত্যার প্ররোচনায় হাত রয়েছে এই জামাইয়েরও।

    তবে শুভঙ্করের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগে নাম থাকায়, গ্রামের বাকি পুরুষদের মতো সে–ও ফেরার। তার স্ত্রী ছবি ভুঁইয়া বলেন, ‘লোকের মুখে শুনেছি, আমার স্বামী ছাত্রটির বাড়িতে চিপস চুরির ব্যাপারে জানিয়েছিল। এর বেশি কিছু জানি না। আমার স্বামী যাত্রাদলে রান্না করে। তিন দিন আগে কাজে চলে গিয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)