• কার্তুজ পাচারে ধৃত যুবক বিজেপি কর্মী, উঠল দাবি
    এই সময় | ২৭ মে ২০২৫
  • এই সময়, কাটোয়া: ঘুম ভাঙার আগেই বেরিয়ে যান স্বামী। সারা দিন কোনও খোঁজই ছিল না তাঁর। রাতে জানা যায়, এসটিএফ গ্রেপ্তার করেছে তাঁকে। রবিবার কলকাতার ধর্মতলায় ১২০ রাউন্ড কার্তুজ সমেত ধৃত রামকৃষ্ণ মাঝির স্ত্রী সোমা মাঝি গোটা ঘটনায় বিস্মিত।

    তাঁর দাবি, ‘ও আগে এমন করেনি। ওর পাঁচ হাজার টাকার খুব দরকার ছিল ধারের কিস্তি মেটানোর জন্য। কয়েকজন আত্মীয়ের থেকে চেয়েও পায়নি। মনে হয়, টাকার জন্যই এসব করেছে ও।’

    রবিবার কলকাতার ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০০টি ৮ এমএম ও ২০টি ৭.৬৫ এমএম কার্তুজ সমেত কেতুগ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মাঝিকে এসটিএফ গ্রেপ্তার করে। জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের পাণ্ডুগ্রাম অঞ্চলের কুলুন গ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ কয়েক বছর ধরেই বিজেপি করে।

    বিজেপি–র একাধিক রাজ্য নেতা-নেত্রীর সঙ্গে তাঁকে মিটিং, মিছিলে যেতে দেখেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, রামকৃষ্ণ একসময়ে দিনমজুরির কাজ করতেন। বছর দুয়েকের মধ্যেই তাঁর জীবন বদলে যায়। মাটির বাড়ি থেকে পাকা বাড়ি হয় তাঁর। মাল বহনের গাড়ি ও ডেকরেটরের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

    পাণ্ডুগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি লক্ষ্মণ মণ্ডল বলেছেন, ‘রামকৃষ্ণ বিজেপি–র দাপুটে নেতা। ও গাড়ি করে হাওড়া, লিলুয়া এ সব জায়গায় যেত। সেখানে হয়তো আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার চালাত। তা না–হলে সামান্য দিনমজুরি থেকে বাড়ি, গাড়ি করল কী ভাবে! আমরা এর আগেও পুলিশকে ওর বিষয়ে জানিয়েছিলাম।’

    পালটা কেতুগ্রামের ৪ নম্বর মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি সদন হাজরা দাবি করেছেন, ‘রামকৃষ্ণ বিজেপি-র কোনও পদে নেই। ভোটের সময়ে ওর ছোট হাতি ভাড়া নিয়েছিলাম আমরা। এ বার কেউ যদি মিটিং–মিছিলে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলে, তার দায় বিজেপি-র নয়।’

    এ দিকে, কার্তুজ উদ্ধারের ঘটনায় ধৃত রামকৃষ্ণর সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত বলেই দাবি করেছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) অফিসাররা। লালবাজার সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রের সদস্যরা শুধু এ রাজ্যে নয়। ভিন রাজ্যেও অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়িত।

    কেতুগ্রামের বাসিন্দা রবিবার হলদিয়া থেকে অস্ত্র নিয়ে কলকাতায় পৌঁছেছিল। ধৃতকে জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, কলকাতায় বেশ কয়েকজনের কাছে ওই কার্তুজ পৌঁছে দেওয়ার টার্গেট ছিল। বেশ কয়েকজনের নাম তাকে জেরা করে জেনেছেন তদন্তকারীরা। তবে, কলকাতা থেকে সেই কার্তুজ অন্য রাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলেই দাবি রামকৃষ্ণর।

    সোমবার ধৃতকে হাজির করানো হয় ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। সরকারি আইনজীবী জানান, কার্তুজ পাচারের পিছনে বড় চক্র রয়েছে। কলকাতা এবং ভিন রাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ওই বিপুল পরিমাণ কার্তুজ আনা হয়েছিল।

    তবে, কোথা থেকে ওই কার্তুজ রামকৃষ্ণর হাতে এসেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে। যদিও ধৃতের আইনজীবী পাল্টা দাবি করেছেন, রামকৃষ্ণ টাকার লোভে ডেলিভারি বয়ের কাজ করেছে। এর বাইরে তাঁর কিছু জানা নেই। দু’পক্ষের সওয়াল–জবাব শেষে ধৃতকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

  • Link to this news (এই সময়)