• ট্র্যাক-কর্মীদের টানা নৈশ ডিউটি, সরব মেট্রোর কর্মী সংগঠন
    আনন্দবাজার | ২৬ মে ২০২৫
  • টানা দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে মেট্রো রেলে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের রাতে কাজ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে রেলকর্মীদের কাজের সময় এবং বিশ্রাম সংক্রান্ত ২০০৫ সালের যে নির্দেশিকা রয়েছে, তা না মেনেই ওই কর্মীদের দিয়ে টানা কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।

    মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিমারি পরিস্থিতির পর থেকে ৮৫ জন কর্মীকে এই অবস্থার মধ্যে টানা কাজ করে যেতে হচ্ছে।

    সাধারণত, এই কর্মীদের কাজের সময় রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট থাকে। কলকাতা মেট্রোয় রাতে পরিষেবা বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সেই সময়েই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়। মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ লাইন ছাড়াও ইস্ট-ওয়েস্ট, নিউ গড়িয়া-রুবি, জোকা-মাঝেরহাট-সহ বিভিন্ন লাইনে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কাজ করেন তাঁরা।

    কর্মীদের একটা বড় অংশকে দিয়ে এ ভাবে টানা রাতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাকে সরাসরি ‘অমানবিক’ বলছেন মেট্রোর কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, একাধিক বার এই ব্যবস্থা বদলের দাবি জানানো হলেও মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেননি। চালু ব্যবস্থায় কর্মীদের রাতে কাজের মেয়াদ দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এ ভাবে কাজ করার জন্য প্রতি ১০ দিনে তাঁদের একটি অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হয়। সে ভাবে মাসে সর্বাধিক ছয় থেকে সাত দিন ছুটি পান তাঁরা। ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের কর্মীদের দিয়ে এ ভাবে টানা কাজ করানোর বিষয়টি নিয়ে রেল বোর্ডের কাছেও অভিযোগ জমা পড়েছে। রেল বোর্ডের সঙ্গে তাদের দাবিদাওয়া আদায় সংক্রান্ত বৈঠকে সমস্যার কথা উত্থাপন করেছে ‘অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে মেন্‌স ফেডারেশন’। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারি মাসে রেল বোর্ড বলে, ওই কর্মীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তাঁদের কাজের সময় এবং নির্ঘণ্ট সংশোধন করা হোক। সমস্যা মিটিয়ে বিষয়টি জানানো হোক রেল বোর্ডকেও। কিন্তু মেট্রো কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ করেননি।

    একই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল তাদের কর্মীদের ক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যার সমাধান করলেও কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ কেন ওই পথে যাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    এ ক্ষেত্রে মেট্রোর কর্মী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ এবং দু’দিন ছুটির বিষয়ে একমত হওয়ার পরেও মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই নির্দেশ কার্যকর

    করেননি বলে অভিযোগ। কলকাতা মেট্রোর কর্মী সংগঠনের নেতৃত্বের কথায়, ‘‘কর্মীদের কাজের সময় নিয়ে অমানবিক আচরণ করছেন কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসে নির্দেশ জারি করেও তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’’’

    কলকাতা মেট্রোর প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ট্র্যাকম্যানদের কাজের সময় নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। যা চলছে, তাকে অমানবিক বললেও কম বলা হয়। কর্মীদের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবেই জোর করে কাজ করানো হচ্ছে। অবিলম্বে এই ব্যবস্থা শোধরানো হোক।’’ গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রেলমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন শুভাশিস।

    মেট্রো সূত্রের খবর, ট্র্যাকম্যানদের ছুটির বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন। যদিও এ নিয়ে কর্তাদের তরফে কেউই মুখ খুলতে চাননি। তাঁরা দায় ঠেলছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। তবে, কাজের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কর্তাদের একাংশও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)