চাকরিহারা আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তাঁকে চিঠি দিয়ে দেখা করতে চাইলেও কারণ স্পষ্ট করেননি বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রবিবার একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘চিঠি আমি পেয়েছি। চিঠিতে কেন দেখা করতে চাওয়া হয়েছে তা বলা নেই। আমি একাধিক বার ওঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি। এটা বুঝতে হবে, সরকার সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে চাইছে। আমাদের দফতর থেকে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ সোমবার ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এবং যে চিঠি ওঁরা দিতে চান, তা কী করে লিখতে হবে বুঝিয়ে কোনও সরকারি অফিসার আবেদন করবেন।’’
তবে চাকরিহারা শিক্ষকেরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথাটিও ব্রাত্য মনে করিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক দল শিক্ষক আমায় চিঠি লিখেছেন। ওঁরা আন্দোলন করছেন। আর একটি দলে আড়াই থেকে তিন হাজার জন শিক্ষক সরকারের উপরে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এক দল কোনও আন্দোলনেই নেই, তাঁরা সরকারের উপরে ভরসা রাখছেন। আমরা তিনটি দলের উপরেই সহানুভূতিশীল।’’
চাকরিহারাদের একটি দল সিপিএম নেতা, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেও গিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সেখানে বলা হয়েছে রিভিউ পিটিশন করে কোনও লাভ হবে না। বিষয়টি শুনে ব্রাত্য বলেন, ‘‘রিভিউ পিটিশনের কোনও ফল নেই? নতুন পরীক্ষাটাও কি ওঁরা বাতিল করতে চান? মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আইনি পথে আমরা শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব। নেতিবাচক কথা ওঁদের (আন্দোলনকারী শিক্ষক) মাথায় ঢোকানো হচ্ছে। আমি বলব সেটায় বিশ্বাস না করে, মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা রাখুন।’’
আন্দোলনকারী যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা দু’বার চিঠি দিয়েছি। মেল বাউন্স করেছে। আবার হাতে লেখা চিঠিও দিয়েছি। সোমবার আবার বিকাশ ভবন খুললে সকাল-সকাল চিঠি দিয়ে আসব। সোমবারই দেখা করার জন্য আবেদন করব।’’ কী লেখা হবে সেই চিঠিতে? চিন্ময় বলেন, ‘‘চাকরির পরীক্ষা ছাড়াই আমাদের পুনর্বহাল করার জন্য সরকার কী করছে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তা জানতে চাইব। এসএসসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেবে বলে শোনা যাচ্ছে সেই নিয়েও সবিস্তার আলোচনা করতে চাই। সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন যাতে গ্রহণ করা হয় এবং দরকারি আইনি তথ্য দিয়ে আমাদের প্যানেল বহাল রাখা হয়, তার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে বলব।’’ তাঁদের সংগঠনের কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই বলেও চিন্ময় জানান।
পাশাপাশি চিন্ময় জানিয়েছেন, গত ১৫ মে বিকাশ ভবনের সামনে গোলমাল, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, সরকারি কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে বিধাননগর উত্তর থানায় পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে। এর আগে কয়েক জন চাকরিহারাকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। চিন্ময় বলেন, ‘‘আমিও থানায় গিয়ে পুলিশকে পূর্ণ সহযোগিতা করব। তবে পুলিশের ভয়ে আন্দোলন থেকে সরছি না।’’
চাকরিহারাদের আর একটি দলের পক্ষে সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিকাশ ভট্টাচার্য, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছি কারণ মুখ্যমন্ত্রী এখনও যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা দিচ্ছেন না। ২২ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর শিটের কপি এখনও রাজ্য সরকার প্রকাশ করছে না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভরসা হারিয়েই আমরা সব রাজনৈতিক দলের কাছে যাচ্ছি।’’
রবিবার অবশ্য রাস্তার ধারে সরে গিয়ে আন্দোলনকারীরা বিকাশ ভবনের সামনের রাজপথ ছেড়ে দেন। ফলে সেই রাস্তায় গাড়ি চলেছে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিদিশা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের বলছি এখনই বিকাশ ভবনের সামনে ভিড় না জমাতে। নতুন জায়গার ছাউনি-সহ পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি হলেই আমরা সেখানে বসব।’’