দিন কয়েক আগেই ভোটার-তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগে কাকদ্বীপ মহকুমার এক সরকারি আধিকারিককে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই দুর্নীতিতে রবিবার ফের প্রশাসনকে বিঁধলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। একই সুর শোনা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও। তিনি ওই দুর্নীতিতে জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকও জড়িত দাবি করে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। এরই মধ্যে এ দিন কাকদ্বীপের কিছু বাসিন্দা ভোটার-তালিকায় নাম তোলার জন্য তৃণমূল নেতাদের ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বলে দাবি করায় চাপানউতোরও শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কেউ ওই দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ মানেননি। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “কাকদ্বীপে কত নাম বাদ গিয়েছে, তা নথিবদ্ধ রয়েছে। এই তথ্য পরিবর্তন করা যায় না। ভোটার-তালিকা সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য রাজ্য মুখ্য নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে রয়েছে।” কাকদ্বীপের বিডিও ঋক গোস্বামীর দাবি, “টাকা নিয়ে ভোটার-তালিকায় নাম তোলার পিছনে ব্লক অফিসের কোনও আধিকারিক যুক্ত নেই।” এ বিষয়ে মহকুমাশাসক মধুসূদন মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সম্প্রতি এলাকার প্রায় ছ’হাজার ভোটারের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন বিধায়ক মন্টুরাম। সেই তদন্তেই মহকুমার এক সরকারি আধিকারিককে নিলম্বিত করা হয়। তার পরেই বিধায়ক মন্টুরাম দাবি করেছিলেন, প্রশাসনের একটি বড় অংশ দুর্নীতিতে যুক্ত। রবিবার তিনি ফের বলেন, ‘‘কাকদ্বীপের মহকুমাশাসকের অফিস এবং ব্লক অফিসের কিছু কর্মী লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই অনিয়ম করেছেন। বড়সড় চক্র এর সঙ্গে জড়িত।”
একই প্রসঙ্গে এ দিন নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দু বলেন, “বহু হিন্দুর নাম কাটা হয়েছে ভোটার-তালিকা থেকে। কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসক যুক্ত আছেন। এই মামলা সিবিআইকে দেওয়া হোক।”
কাকদ্বীপের ভোটার-তালিকা নিয়ে এ দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায় কিছু গ্রামবাসীকে। তাঁদের অভিযোগ, রেশন কার্ড, আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও শুধু ঘুষ না-দেওয়ায় তাঁদের অনেকের নাম উঠছে না। আবার কয়েক জন দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন আগে বাংলাদেশ থেকে এসে ভোটার-তালিকায় নাম তুলতে তাঁরা তৃণমূল নেতাদের ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তবে, কোনও পক্ষই এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগ জানাননি।
মন্টুরাম দলের কারও টাকা নেওয়ার কথা মানেননি। বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক কৌশিক দাসের দাবি, “পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূলই এই কাজ করেছে।” তৃণমূলের মথুরাপুরের সাংসদ তথা দলের ভোটার স্ক্রুটিনি কমিটির রাজ্যের সদস্য বাপি হালদার বলেন, ‘‘কাকদ্বীপের বিধায়ক যে অভিযোগ করেছেন তা নিয়ে প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। প্রশাসনিক তদন্তে যে বা যারা দোষী প্রমাণিত হবে, প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সে তৃণমূলের হলেও। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে আগেই জানিয়েছেন।’’