কোচবিহারে মীনাক্ষী, পুরনো হাতেই বাকি জেলা সিপিএমে
আনন্দবাজার | ২৪ মে ২০২৫
তিন বারের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েও জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন দু’জন। বয়স-সীমা অতিক্রম করেও জেলা সম্পাদক পদে ফিরেছেন এক জন। চার জেলা সম্পাদক আবার একই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। দু’টি জেলায় কমিটি গঠন ঘিরে বিবাদের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে দলের অভ্যন্তরে।
প্রায় আধ ডজ়ন জেলায় সম্মেলনের সময়ে সমস্যা বা গোলমাল হয়ে থাকলেও দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জেলার দায়িত্ব বণ্টনে স্থিতাবস্থাই রাখতে চলেছে সিপিএম। আগে রাজ্য নেতারা যে যেখানে দায়িত্বে ছিলেন, মূলত তাঁরাই আলোচনা করে সময়মতো সমস্যা মেটাবেন বলে ঠিক হয়েছে। দলের অন্দরে বিতর্কের পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম রাজ্য কমিটির বৈঠকে বার্তা দিয়েছিলেন, জেলা সংগঠনের ক্ষেত্রে যা ‘ব্যতিক্রম’ হয়েছে, তার সবই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা। তার পরে জেলা কমিটির বৈঠক ডেকে মালদহে কৌশিক মিশ্রকে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিন বারের মেয়াদ অতিক্রম করেও জেলা সম্মেলনে সম্পাদক হয়েছিলেন অম্বর মিত্র।
বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ছাড়ালেও কোচবিহারে শেষ মুহূর্তে জেলা সম্পাদক পদে পরিবর্তন রুখে অনন্ত রায়কেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। একটি সূত্রের ইঙ্গিত, কোচবিহারের ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবনা এর পরে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিন বারের মেয়াদ পেরিয়ে ফের সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া পূর্ব মেদিনীপুরের নিরঞ্জন সিহির বিকল্প খোঁজার জন্যও চাপ বাড়বে। তবে বছরখানেকের মধ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং তার জন্য সংগঠনকে ‘দ্বন্দ্ব এড়িয়ে’ তৈরি রাখার কথা ভেবে কোথাও বাড়তি চাপ তৈরি করতে চাইছে না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সম্মেলন-পর্বের পরে সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। রাজ্যে ওই সম্পাদকমণ্ডলীর ১৫ সদস্যের মধ্যে জেলাওয়াড়ি দায়িত্ব বিভাজনের যে প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে, তাতে বড়সড় কোনও বদল নেই। সিপিএম সূত্রের খবর, জেলা সম্পাদক বাছাই নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকা কোচবিহারের দায়িত্ব এ বার দেওয়া হচ্ছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর নতুন সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। সেই সঙ্গে তাঁর অতিরিক্ত দায়িত্ব হতে পারে নিজের জেলা পশ্চিম বর্ধমান। পাশের পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনও এ বার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাঁকে নিজের জেলাতেই কাজ করতে বলা হচ্ছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। তবে দুই বর্ধমানের প্রাথমিক দায়িত্ব আগের মতোই থাকছে আভাস রায়চৌধুরীর হাতে। সেই সঙ্গে তাঁকে এ বার দেওয়া হচ্ছে পুরুলিয়া জেলার দায়িত্ব।
ভোটাভুটিতে জেলা সম্পাদকের হেরে যাওয়া ঘিরে বড় বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। সেই বিরোধের চোরা স্রোত রয়ে গিয়েছে সেখানে। ওই জেলার দায়িত্ব নিজের হাতেই রাখছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই সঙ্গেই তাঁর দেখার কথা মুর্শিদাবাদ। ওয়াকফ-প্রতিবাদ ঘিরে অশান্তি এবং বিভাজনের রাজনীতির জেরে যে জেলা এখন ‘স্পর্শকাতর’ হয়ে উঠেছে। আগের মতোই সুজন চক্রবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর ও সেই সঙ্গে দুই ২৪ পরগনা, রামচন্দ্র ডোম বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য হাওড়া, হুগলি দেখবেন বলে ঠিক হয়েছে আপাতত। সুমিত দে নদিয়া ও মালদহ, দেবব্রত ঘোষ নিজের জেলা হুগলির প্রাথমিক দায়িত্বে থাকবেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবলীনা হেমব্রমকে সচেতন ভাবেই বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে এনেছে সিপিএম। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও দার্জিলিঙের তিন জেলা সম্পাদক দেবব্রত, সৈয়দ ও সমন পাঠক কেন্দ্রীয় কমিটিতে গিয়েছেন পরে। আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, ওই তিন জেলার ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবনা এখনও হয়নি। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘জেলায় জেলায় নতুন কমিটি পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করুক। পরবর্তী পদক্ষেপ তার পরে ভাবা যাবে।’’