ভোটার-আর্জিতে অনুমোদন কার, নির্দিষ্ট করা হল দায়িত্ব
আনন্দবাজার | ২৪ মে ২০২৫
ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তি এবং সন্দেহজনক ভোটারদের উপস্থিতি ঠেকাতে তৎপর জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই তৎপরতার অঙ্গ হিসেবে এ বার ভোটার তালিকায় সংযোজন, বিয়োজন এবং সংশোধনের আবেদনের অনুমোদনে অফিসারদের দায়িত্ব বণ্টনের প্রচলিত পদ্ধতি বদলের নির্দেশ দিল তারা। নতুন নিয়মে লিখিত ভাবে এক-একটি বিধানসভা কেন্দ্রের এলাকাগুলির দায়িত্ব নিজের অধীনস্থ অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেবেন জেলাশাসক। সূত্রে র দাবি, এর ফলে কোন আবেদনে কে অনুমোদন দিয়েছেন তা বোঝা যাবে। এর আগে প্রযুক্তিগত কিছু ফাঁক থাকায় এ বিষয়ে দায়বদ্ধতা চিহ্নিতকরণে অসুবিধা হত।
প্রশাসনের একাংশের মতে, কাজে ত্রুটি হলে কমিশন কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে। তাই এ বার অফিসারেরা ‘অতি-সাবধানী’ হবেন। বহু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবেও নানা কাজ করতে হয়। শাস্তি থেকে বাঁচতে সেই প্রভাব বাঁচিয়ে চলতে চাইবেন অধিকাংশ অফিসার।
জেলা নির্বাচনী অফিসার (ডিইও) হলেন খোদ জেলাশাসক। তাঁর অধীনে ‘ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ (ইআরও) হন সাধারণত মহকুমাশাসক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদের অফিসার ও ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ (এইআরও) হন সাধারণত বিডিও, যুগ্ম বিডিও বা অন্য সিনিয়র অফিসার। ভোটার তালিকায় নাম তোলা, সংশোধন বা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তগ্রহণে পুরোপুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত ইআরও এবং এইআরও-রা। দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইনে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। তাতে একটি বিধানসভা কেন্দ্রে সব এইআরও-রা নতুন নাম তোলা, মৃতের নাম বাদ বা সংশোধন সংক্রান্ত সমস্ত আবেদনপত্রেরই নিষ্পত্তি করতে পারতেন। কমিশন-কর্তারা জেনেছেন, সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারে কিছু ফাঁক থাকার কারণে অনুমোদন না থাকা ব্যক্তিরাও সেই কাজ করছেন। তাই অবৈধ ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়ছে বা বাদ যাচ্ছেন যোগ্যরা। এই কাজ কার হাত দিয়ে হয়েছে, তা ধরা যাচ্ছে না।
কমিশনের নির্দেশ, একটি বিধানসভা এলাকায় ‘পার্ট’ বা ভোটকেন্দ্রগুলি ভাগ করে দিতে হবে। জেলাশাসকেরা লিখিত নির্দেশ দিয়ে ইআরও-র অধীনে এক-একজন এইআরও-কে নির্দিষ্ট কিছু ভোটকেন্দ্র এলাকার দায়িত্ব দেবেন। এ-ও বলে দেবেন যে সংশ্লিষ্ট এইআরও নিজের চৌহদ্দির বাইরে অন্য কোনও পার্টের কাজ করবেন না। কোন ইআরও-র অধীনে কোন এইআরও কোন কোন ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পেলেন, সেইতথ্য পাঠাতে হবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) অফিসে। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আবেদনের উপরে সামগ্রিক নজরদারি করবেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এইআরও-র ইউজ়ার নেম পাসওয়ার্ড প্রয়োগ করে অবৈধ ভাবে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তির অপরাধে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিন জন নির্বাচনী অফিসারের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। আচমকা জানা গিয়েছে বলে শুধু একটি এলাকায় এই চক্র ধরা গিয়েছে। গোটা রাজ্যেই এ বার সফটওয়্যারের ফাঁক বোজানো হচ্ছে।”
একটি বিধানসভা কেন্দ্রে সাধারণত ১৮০-২৮০টি ‘পার্ট’ থাকে। কোনও বিধানসভা এলাকায় ১০ জন এইআরও থাকলে এবং ২৮০টি ‘পার্ট’ থাকলে এক-এক জনের ভাগে ২৮টি করে ‘পার্ট’ আসবে। কোনও অফিসারকে ওই ২৮টি ‘পার্ট’-এর আবেদন সামলাতে হবে এবং গরমিল হলে তাঁকেই জবাবদিহি করতে হবে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ইআরও-ও দায়বদ্ধ থাকবেন। সামগ্রিক নজরদারির দায়িত্বে থাকায় জেলাশাসকও দায় এড়াতে পারবেন না। এক জেলা-কর্তার বক্তব্য, “একসূত্রে সর্বস্তরের আধিকারিকেরা কমিশনের নিয়ম-বিধি মেনে পদক্ষেপ করতে বাধ্য থাকবেন। বাহ্যিক কোনও প্রভাব এলেও বিধির বাইরে বেরোনো কার্যত অসম্ভব।”
জেলা কর্তাদের উদ্দেশে কমিশনের বার্তা, রাজ্যের সব সিস্টেম ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সিস্টেম ম্যানেজার এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। অনলাইন ব্যবস্থাটি ফাঁকফোকর মুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “একই নম্বর বা সিরিজ়ে একাধিক ভোটার কার্ডের সমস্যার সমাধান করেছে দিল্লির নির্বাচন সদন। বুথ লেভেল অফিসার নিয়োগের লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র। এ বার অবৈধ ভাবে ভোটার আবেদনের অনুমোদন ঠেকাতে যাবতীয় পদক্ষেপের বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।”