কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা মানেই একরাশ অনিশ্চয়তা— এই প্রকল্পটি বৈধ তো? ছাড়পত্র রয়েছে তো? যত তলা বানানো হচ্ছে, ততগুলির অনুমতি আদৌ নেওয়া হয়েছে কি? এত দিন এই সব প্রশ্নের উত্তর সাধারণ মানুষ পেতেন প্রোমোটারের মুখের উপর নির্ভর করে, কাগজপত্র দেখে আইনজীবীর মাধ্যমে যাচাই করে, কিংবা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে পুরসভার নথিপত্র ঘেঁটে।
কিন্তু এ বার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানসূত্র ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি নির্মাণস্থলে বসানো হবে বড় একটি বোর্ড, যাতে লেখা থাকছে নির্মাণ-অনুমতির সমস্ত তথ্য এবং থাকছে একটি কিউআর কোড। সেই কোড যে কেউ নিজের মোবাইলে স্ক্যান করলেই জেনে নিতে পারবেন, ফ্ল্যাট বা প্রকল্পটি বৈধ কিনা। বোর্ডে কিউআর কোড থাকাটা শুধু প্রযুক্তিগত সুবিধাই নয়— এটি নাগরিকদের হাতে ঠিক তথ্য পাওয়ার একটি সহজ উপায়।
বর্তমানে এমন বহু অভিযোগ পুরসভায় জমা পড়ে, যেখানে বেআইনি নির্মাণের প্রসঙ্গ তুললেও ঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীরা। এখন থেকে কোনও নির্মাণে কত তলা অনুমোদিত, রেজিস্ট্রেশন নম্বর কী, অনুমতি কবে দেওয়া হয়েছে, কে প্রকল্পের দায়িত্বে— এই সমস্ত তথ্য এক স্ক্যানে নাগরিকের নাগালে মিলছে।
যে নির্মাণস্থলে এই কিউআর বোর্ড থাকবে না, পুর নিয়ম অনুযায়ী সেটিকে বৈধ বলা যাবে না। এমনকি, বোর্ডে কিউআর কোড থাকলেও স্ক্যান করলে যদি তথ্য না মেলে, তা হলেও সেই নির্মাণকে ঘিরে প্রশ্ন উঠবে।
এখানেই শেষ নয়। এই নিয়ম না মানলে কলকাতা পুর আইন, ১৯৮০-র ৪০১ ধারা অনুযায়ী নির্মাণকাজ বন্ধও করে দিতে পারবে পুরসভা। অর্থাৎ, বোর্ড না থাকলে বা কিউআর কোডে ভুল তথ্য থাকলে শুধু তথ্য গোপন থাকবে না, আইনি ঝামেলাতেও পড়তে পারেন প্রোমোটার বা নির্মাতা।
এই নতুন ব্যবস্থা শুধু ফ্ল্যাট ক্রেতার স্বার্থে নয়, বরং গোটা শহরে বেআইনি নির্মাণ, অতিরিক্ত তল তৈরি কিংবা অনুমতি ছাড়া প্রকল্প চালানো ঠেকাতেও কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বরো অফিস ও ভবন বিভাগকে কিউআর কোড তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক জন অভিজ্ঞ পুরকর্তা বলেন, “আগে অভিযোগ এলেও তা প্রমাণ করা কঠিন ছিল। এখন ফোন তুলে কিউআর কোড স্ক্যান করলেই বোঝা যাবে, নির্মাণ বৈধ কিনা। শহরবাসী নিজেরাই এখন থেকে তা জেনে নিতে পারবেন।”