• পথে যানশাসনের জন্য পুলিশ কই! পর পর দুর্ঘটনায় প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ২৪ মে ২০২৫
  • কোথাও বাস গিয়ে থামছে স্ট্যান্ড থেকে অনেকটাই দূরে। বাস ধরতে যাত্রীদের ছুটতে হচ্ছে পড়িমরি করে। কোথাও কয়েকটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে এমন ভাবে পথ আটকে দাঁড়াচ্ছে যে, পিষে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে যখন-তখন। বহু ক্ষেত্রে আবার হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীরা পথে দাপিয়ে বেড়ালেও ধরার কেউ থাকছেন না। দেখা মিলছে না বিধি ভেঙে একমুখী রাস্তায় ঢুকে পড়া গাড়ির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার লোকেরও! এই মুহূর্তে তীব্র গরমের মধ্যে কলকাতার পথে যানশাসনের এমনই পরিস্থিতি চোখে পড়ছে বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, গরমে পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের কাজের সময় দু’ঘণ্টা করে কমানোর জেরেই কি পথে চোখে পড়ছে না পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী? লালবাজার ক্যামেরায় নজরদারি চালিয়ে মামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করলেও পথে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর উপস্থিতি কম থাকাতেই কি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না এমন পরিস্থিতি?

    সম্প্রতি জওহরলাল নেহরু রোডে যাত্রী তোলার সময়ে দুই বাসের রেষারেষির অভিযোগ সামনে এসেছে। তাতে পাঁচ যাত্রী আহতও হয়েছেন। রেষারেষির সময়ে একটি বাস পর পর সাতটি গাড়িকেও ধাক্কা মেরেছে বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের দাবি, এমন ঘটনা ঘটছে শহরের প্রায় সর্বত্র। মূলত দিনের বেলায় গরমের মধ্যে পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী চোখে পড়ছে না। আর সেই সুযোগেই লাগামহীন ভাবে ছুটছে বাস।

    মানিকতলা মোড়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো এক যাত্রীর দাবি, ‘‘রোদে বাস স্টপের ছায়ায় দাঁড়াচ্ছেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস গিয়ে থামছে অনেকটাই আগে। ফলে, যাত্রীদের ছুটতে হচ্ছে বাস ধরার জন্য। কিন্তু তার মধ্যেই অন্য বাস যাত্রী ধরতে এমন ভাবে ঢুকে আসছে যে, বিপদ ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে। অথচ, দেখার কেউ নেই। ব্যস্ত সময়ে তবু কিছু ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দিনের অন্য সময়ে কেউ দেখার নেই!’’

    একই রকম অভিযোগ হাজরা মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা আর এক যাত্রীর। তিনি বললেন, ‘‘যে রাস্তায় গাড়ির ঢোকারই কথা নয়, সেখানেও যেমন খুশি মোটরবাইক, গাড়ি ঢুকে পড়ছে। অটো থেকে নামার পথে এমনই একটি মোটরবাইক পায়ে ধাক্কা মেরেছে। কোনও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকেই দেখা গেল না, অবস্থা সম্পর্কে জানানোর জন্য।’’ জোড়াবাগান মোড়েই আবার চোখে পড়ল, পর পর মোটরবাইকে হেলমেটহীন সওয়ারির দল। কখনও এক বাইকে তিন জন, কখনও তারও বেশি।

    কাছের একটি ট্র্যাফিক পুলিশ কিয়স্কে থাকা উর্দিধারী পুলিশকর্মীকে বিষয়টি জানাতে তিনি বললেন, ‘‘এই গরমে কত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? ক্যামেরায় সব ধরা পড়ছে। তাতেই কেস চলে যাচ্ছে।’’ কিন্তু দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে গেলে কি মামলা করে পূরণ করা যাবে? পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন তো! আশপাশে কোথাও গিয়েছেন, ঠিক চলে আসবেন।’’ কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারদের তো ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করারই কথা নয়! আর উত্তর মেলে না।

    এর মধ্যেই সম্প্রতি কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা পথে নেমে কাজ করা পুলিশকর্মীদের কাজের সময় দু’ঘণ্টা করে কমানোর ঘোষণা করেছেন। মূলত কনস্টেবল, হোমগার্ড ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের মতো নিচুতলার কর্মীদের কাজের সময় কমানো হয়েছে। গরম থেকে বাঁচতে তাঁদের ক্রসবেল্ট এবং চামড়ার অ্যাঙ্কলেট ব্যবহার করতেও বারণ করা হয়েছে।

    কিন্তু এ নিয়ে বাহিনীর অন্দরেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ক্ষুব্ধ ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, এই নির্দেশ তাঁদের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে না কেন? লালবাজারের যুক্তি, যে হেতু সার্জেন্টদের এক জায়গায় রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় না, তাঁরা রাস্তায় ঘুরে কাজ করেন, তাই এই নিয়ম তাঁদের ক্ষেত্রে কার্যকর করা হয়নি। বাহিনীর অনেকেই বলছেন, কাজের সময় কমানোর নির্দেশিকা পালন করা হবে কী ভাবে? বাহিনীতে কর্মীর সংখ্যা এতই কম যে, নিচুতলার ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের বহু কাজ সামলাতে হয়। সেই কারণে খাতায়-কলমে আট ঘণ্টার ডিউটি হলেও অনেকেই ১০-১২ ঘণ্টার আগে ছুটি পান না। দু’ঘণ্টা কম কাজ করিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া সেখানে অলীক ব্যাপার। এর মধ্যেই ঘটে চলেছে পর পর দুর্ঘটনা।

    কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসি ইলওয়াদ শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও বললেন, ‘‘গরমে কয়েকটি জায়গায় হয়তো ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যা কম বলে চোখে পড়তে পারে। কিন্তু ক্যামেরায় নজরদারি এবং পথে ট্র্যাফিক পুলিশ, দুই-ই রয়েছে। কড়া হাতেই সমস্ত দিক সামলানো হচ্ছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)