বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় মেট্রোর সেন্ট্রাল পার্ক স্টেশনের একটি স্তম্ভের কাছে বসে ছিলেন বাণী সরকার। এসএসসি-র তালিকাভুক্ত চাকরিহারা এক যোগ্য শিক্ষিকা। চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। ২০২৩ সালে স্তনে কর্কট রোগ ধরা পড়ে বাণীর। অস্ত্রোপচার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও বিপুল খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা চলছে। ডিসেম্বরের পরে চাকরি চলে গেলে কী ভাবে চিকিৎসা চালাবেন, আপাতত সেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তাঁর ঘুম ছুটেছে।
পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের সতীকৃষ্ণমণি হাইস্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষিকা বাণী। স্কুল থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে আহিরা নামের একটি গ্রামে তিনি স্বামী, ছেলে ও শাশুড়ির সঙ্গে থাকেন। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাণী বলেন, ‘‘২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়েছিল। সে বছরের ডিসেম্বরে অস্ত্রোপচার হয়। ক্যানসারের চিকিৎসা চলে মুম্বইয়ে। ২০২৪ সালে আটটি কেমো এবং ১৫টি রেডিয়েশন নিতে হয়েছে। এখনও প্রতিদিন দামি ওষুধ খেতে হয়। ক্যানসার শরীরের অন্যত্রও ছড়িয়েছে কিনা, দেখার জন্য দু’মাস অন্তর শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয়। সেই পরীক্ষার খরচও প্রচুর। চাকরি চলে গেলে চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে আসবে?’’
আপাতত বাণী সুস্থ হলেও খুবই দুর্বল। বাঁ হাত দিয়ে বিশেষ কোনও কাজ করতে পারেন না। বাঁ হাতে চাপ পড়লে বা অনিয়ম করলে হাত ফুলে ওঠে। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, এই অবস্থায় তাঁকে অন্তত ন’ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। কিন্তু চাকরিহারা হওয়ার আতঙ্কে ঘুমও ছুটেছে বাণীর। রক্তের শর্করা বেড়ে গিয়েছে, বেড়েছে রক্তচাপও।
বাণীর স্বামী অমিতকুমার মণ্ডল সরকারি চাকরি করেন। বাণী বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ির আর্থিক অনটন ছিল। স্বামী চাকরি পেয়ে বাড়ির হাল ধরেছেন। বাড়ির সব দিক ওঁকে দেখতে হয়। আমার চাকরি চলে গেলে কী হবে, ভেবে পাচ্ছি না।’’ আতঙ্কিত বাণীর প্রশ্ন, ফের যদি পরীক্ষা দিতে বলা হয়, এই শারীরিক অবস্থায় কী ভাবে সেটা সম্ভব?
শারীরিক অসুস্থতার কারণেই বিকাশ ভবনের সামনে বেশি ক্ষণ বসে থাকতে পারেননি তিনি। শুক্রবার বিকেলের ট্রেন ধরে ফিরে যাওয়ার কথাও জানালেন। বাণী বলেন, ‘‘ডাক্তারের অনেক রকম নিষেধাজ্ঞা আছে। বাইরের খাবার খাওয়াও বারণ। তবু বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনে বহু বার এসেছি। যে দিন আসি, ঘর থেকে খাবার নিয়ে আসি। আন্দোলন তো ছাড়তে পারব না। আমরা যোগ্য। এই লড়াই আমাদের চাকরি বাঁচানোর।’’
২০১৬ সালের এসএসসি-র প্যানেলের অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থী, কর্কট রোগে আক্রান্ত সোমা দাসকে চাকরি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। বাণী বলেন, ‘‘আমিও তো ক্যানসার আক্রান্ত। তবে অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থী নই। আমি কর্মরত শিক্ষিকা। এবং আজ চাকরিহারা। আমিও আবেদন করছি, যেন আমার চাকরিটা আবার ফেরত পাই।’’