অয়ন ঘোষাল: লাগাতার তুমুল বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ায় বিপর্যস্ত দেশের পশ্চিম প্রান্তের আরব সাগর লাগোয়া একাধিক রাজ্য। গোয়া কোঙ্কন মহারাষ্ট্র কর্ণাটক প্রবল বৃষ্টি পেয়েই চলেছে। পশ্চিমঘাট পর্বত মালার সমুদ্রের দিকের মুখ করে থাকা অংশ আগামী আরো প্রায় ৪৮ ঘণ্টা এইভাবেই লাগাতার দুর্যোগের কবলে পড়বে। ঠিক সেই কারণেই আরব সাগরের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এবার নতুন পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্বের একাধিক আবহাওয়া গবেষণা মডেল। গতকাল পর্যন্ত জিএফএস সহ পাঁচটি আন্তর্জাতিক মডেল দেশের দুই প্রান্তে জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছিল। কিন্তু মধ্যরাতের পর দুটি মার্কিন এবং একটি জার্মান আবহাওয়া গবেষণা মডেল দাবি করছে ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার আগেই যেভাবে লাগাতার তোলপাড় করা বৃষ্টিতে তার অভ্যন্তরীণ শক্তিক্ষয় হচ্ছে, তাতে আরব সাগরে আলাদা করে আর ঘূর্ণিঝড় হবে না খুব সম্ভবত। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ প্রক্রিয়া অনুয়ায়ী শ্রীলঙ্কার দেওয়া নাম শক্তি আরব সাগরের ওই সিস্টেমে ব্যবহার করার প্রয়োজন নাও হতে পারে।
ঠিক এই জায়গা থেকেই এবার নতুন করে সবার নজর শিফট হয়েছে বঙ্গোপসাগরের সিস্টেমের দিকে। পশ্চিম মধ্য এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর জুড়ে ২৮ মে শক্তিশালী নিম্নচাপ ৩০ মের মধ্যে আরো আরো শক্তি বৃদ্ধি করতে চলেছে। আগাম প্রবল বর্ষণ হতেই থাকলে সিস্টেম ভিতরে ভিতরে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের এই সিস্টেম আজ ২৪ তারিখেও দেশের পূর্ব দিকের কোনো উপকূলে এখনও পর্যন্ত উল্লেখ্যযোগ্য কোনো বৃষ্টিপাত ঘটায় নি। অর্থাৎ চক্রবৎ এই সিস্টেম থেকে কোনকিছুই এখনও পর্যন্ত স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসেনি। অর্থাৎ এক জায়গায় থিতু হয়ে শক্তি সঞ্চয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের এই সিস্টেমটির মধ্যে। বিভিন্ন মডেল এখনও পর্যন্ত যা জানাচ্ছে তাতে ২৭ তারিখ থেকেই এটি শক্তি সঞ্চয় করবে। ২৮, ২৯ শক্তি বৃদ্ধি করবে। ফরমেশন সম্পূর্ণ হলে প্রাথমিক ভাবে এটি উত্তর - উত্তর পশ্চিম অর্থাৎ ওড়িশার ভদ্রকের দিকে এগোবে। এরপর গতিপথ একাধিকবার পরিবর্তন করে এটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মংলা এবং ক্ষেপুপাড়ার দিকে যাবে। সেখানেই ভূমিভাগে প্রবেশ করবে। এটি পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার কে সমান্তরাল ভাবে অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিলে এটির নামকরণ হতে পারে শক্তি। সেক্ষেত্রে পূর্বতন নাম মন্থা আপাতত নামের ক্রমতালিকায় রিজার্ভ থাকতে চলেছে।
কী কী হতে পারে? সম্ভাব্য তালিকা...
১) দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় বিশেষত দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ২৮ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে উত্তাল সমুদ্র এবং জলোচ্ছ্বাস।
২) দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কখনও অতিভারী বৃষ্টি।
৩) দক্ষিণবঙ্গের উপকূল এলাকায় ৫০ থেকে ৭০ এবং কোনো কোনো সময় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া। দক্ষিণবঙ্গের তালিকাভুক্ত বাকি জেলায় ৩৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া।
৪) মৌসুমী বায়ু এবং ট্রপিক্যাল সিস্টেমের জোড়া ফলায় উইন্ড শেয়ারে তারতম্যের জন্য আঞ্চলিক ভাবে মিনি টর্নেডোর মতো ঝাপটা বা ওয়াটার স্পাউট।
৫) উপকূল লাগোয়া নিচু এলাকায় জলমগ্ন পরিস্থিতি। নদী প্লাবন। কাঁচা দুর্বল বাঁধের ক্ষতি।
৬) হাইলাইট অঞ্চল পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা।