চম্পক দত্ত: লোকালয়ে যাতে হাতি না আসে এবং জঙ্গলের মধ্যেই যাতে তারা সীমাবদ্ধ থাকে তার জন্য বনদফতর নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। হাতিদের জন্য মেদিনীপুরে তৈরি হচ্ছে বাঁশ বন, যা হাতিদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সারা বছর ধরেই প্রায় থাকে ২০০টি হাতি। খাওয়ারের খোঁজে তারা জঙ্গল ছেড়ে মাঝে মধ্যেই চলে আসে লোকালয়ে। ক্ষতি করে জমির ফসল, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এবার লোকালয়ে হাতির আসা ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বনদপ্তর। জঙ্গলে লাগানো হচ্ছে হাতির অন্যতম প্রিয় খাদ্য বাঁশ গাছ।
বাঁশ গাছ হাতির অন্যতম পছন্দের খাদ্য এবং এই বাঁশের বন তৈরি করলে হাতির খাদ্য সরবরাহ অনেকটাই নিশ্চিত করা যাবে, ফলে জঙ্গলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে হাতিগুলি। এতে হাতি-মানুষের সংঘাত কমাতেও সাহায্য করবে। বিশেষ করে দল হাতির পাশাপাশি দলছুট হাতি খাবারের খোঁজে মাঝে মধ্যেই ঢুকে পড়ে গ্রামে। জঙ্গলের মধ্যেই তারা খাবার পেলে গ্রামে হানা দেওয়া কমবে বলেও মনে করছে বনদফতর।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর বন বিভাগে ৩০ হাজার বাঁশের চারা তৈরির কাজ চলছে যা লাগানো হবে ৮০ হেক্টর জায়গা জুড়ে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত হাতি উপদ্রব এলাকায় এই বাঁশ গাছ লাগানো হবে বিভিন্ন প্রজাতির। যার মধ্যে চাঁদড়া, পিড়াকাটা, লালগড় এই তিনটি রেঞ্জেই ৩০ হাজার বাঁশ গাছের চারা লাগানো জঙ্গলে।
তবে একটি জায়গায় নয়, জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় বাঁশ গাছ লাগানো হবে। হাতিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে বলে মনে করছেন বনকর্তারা।
মেদিনীপুর বিভাগের ডিএফও দীপক এম রেড্ডি বলেন, 'মূলত হাতিদের খাদ্যের যোগান দিতে বাঁশ গাছ লাগানো হবে। শাল, আকাশমনি গাছ লাগানোর পর সেটা বড় হতে লাগছে ৫-৬ বছর। তার পাশাপাশি বাঁশ গাছ লাগানো হচ্ছে যা অল্প সময়ে বড় ঝাড় তৈরি হয়।এরফলে হাতিগুলি জঙ্গল ছেড়ে যখন তখন খাবারের খোঁজে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে যেত সেটা অনেকটাই কমবে। জঙ্গলে খাবার পেলে গ্রামে প্রবেশ করতে চাইবে না।' উত্তরবঙ্গে তা অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও তিনি বলেন।
এদিকে এই চারা তৈরীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে রেঞ্জ অফিসগুলিতে নিজেরাই চারা তৈরি করছে বনকর্মীরা। নির্দিষ্ট সময়ে তা জঙ্গল এবং জঙ্গল ও লোকালয়ের মধ্যবর্তী এলাকায় লাগানো হবে। জাওয়া, ভালকি, তরল, বাশনি সহ বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশের চারা তৈরি করা হচ্ছে। মূলত যেসব জঙ্গলে হাতি থাকে, সেইসব জঙ্গলেই বেশি করে বাঁশ গাছ লাগানো হবে।
বর্তমানে হাতিরা বিভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে অভ্যস্ত। কাঁঠাল, বট, কুর্চি গাছের পাতার পাশাপাশি বাঁশ গাছও পছন্দ করে হাতিরা খেতে। ফলে দলছুট হাতি অন্যান্য গাছের পাতার সঙ্গে বাঁশ গাছের পাতা খেয়েও থাকতে পারবে। সেই সঙ্গে একাধিক জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস চাষ করা হয়েছে। বনদফতর আশা করছে এরফলে লোকালয়ে হাতির হানা অনেকটাই কমবে। এখন দেখার বনদপ্তরের এই বিশেষ পদ্ধতি কতটা ফলপ্রসূ হয়।