• কেন ফেনা কোপাইয়ে, জলের নমুনা পরীক্ষার দাবি
    আনন্দবাজার | ২৩ মে ২০২৫
  • দূষণ না কোনও রাসায়নিকের জেরে বিষক্রিয়া? কী কারণে শান্তিনিকেতনের কোপাই নদীতে সাদা ফেনা দেখা যাচ্ছে তার স্পষ্ট হদিস মিলল না বৃহস্পতিবারেও। এ দিনও কোপাইয়ের জলে সাদা ফেনা দেখা গিয়েছে শান্তিনিকেতনের গোয়ালপাড়ার কাছে। কিন্তু কেন এমন হাল আবেগের কোপাইয়ে, তার প্রকৃত কারণ খোঁজার চেষ্টা হয়েছে বলে খবর মেলেনি।

    বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা নদী গবেষক মলয় মুখোপাধ্যায় এবং পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত উভয়েরই মত, যত দ্রুত সম্ভব জলের নমুনা সংগ্রহ করে এবং তা পরীক্ষা করে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। কোপাই নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা। কিন্তু তা হয়েছে বলে খবর নেই। বোলপুরের বিডিও জানিয়েছিলেন সেচ দফতরকে বিষয়টি জানানোর কথা। কিন্তু কাজটি তাদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল) ললিতনারায়ণ সিংহ বলছেন, ‘‘সেচ বিভাগের কাজ বন্যা নিয়ন্ত্রণ। জলের মান নিয়ে কাজ আমাদের নয়। এটা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ দেখতে পারে। তবে জলের মান খারাপ হয়েছে বলেই ফেনা দেখা যাচ্ছে।’’ তবে বিষয়টির তাঁদের নজরে আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ঝাড়খণ্ডের খাজুরি থেকে যাত্রা শুরু করেছে নদীটি। উৎসস্থল ওই গ্রামের কাছেই। কোপাইয়ের সেখানে নাম শাল নদী। বস্তুত, বিনুরিয়া গ্রামের আগে পর্যন্ত কোপাই শাল নদী নামেই পরিচিত। শান্তিনিকেতনে কোপাই নদীর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আবেগও। কিন্তু বহুদিন ধরেই নদীর পাড় ঘেঁষে নির্মাণ, মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

    মলয় জানান, ১৯৯১ সালে ওই নদীর উৎসস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তিনি। নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কতটা বদল হল, তা দেখার জন্য তার ২৫ বছর পর, ২০১৭ সালে ফের একবার একই পথ হেঁটেছিলেন মলয়। সঙ্গী ছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। মলয় জানান, সে বারই তাঁদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছিল কোপাই ঘেঁষে যেখানে সেখানে ইটভাটা গড়ে তোলায়, মাটি কেটে নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টির জল যে এলাকা থেকে নদীগর্ভ পড়ে সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর গতি পথ আটকে বাঁধ তৈরি করা, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালি তোলার মতো বিষয়গুলি দেখেছিলেন তাঁরা।

    এখন বর্ষার সময়টুকু বাদ দিলে কোপাই নদী কার্যত স্রোতহারা। এ বার নদীর জলে সাদা ফেনা দেখা দেওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন মলয় বলছেন, ‘‘আমি যাব এবং নদীর জলের নমুনা সংগ্রহ করব। কেন ফেনা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি চাইছি।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘কোনও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পড়ার জন্য না কি মাছ ধরার জন্য নদীতে কিছু ব্যবহার করার জন্য ফেনা হয়েছে তা দেখা দরকার। না অন্য কারণে ফেনা হয়েছে তা জানতে এখনই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার প্রয়োজন।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)