ভোটার, আধার কার্ড থাকলেই সরকারি কোনও সুবিধার আবেদন করতে পারেন নাগরিকেরা। কোটি কোটি উপভোক্তাও রয়েছে রাজ্যের অনুদান প্রকল্পগুলিতে। ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি এবং অবৈধ ভোটারদের উপস্থিতি প্রকাশ্যে আসায় সেই উপভোক্তা তালিকায় কারা ঢুকে পড়ছে, তা নিয়েও চিন্তা বেড়েছে। শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়াই নয়, অবৈধ সুবিধাভোগীদের ভিড়ে সরকারি কোষাগারে চাপ পড়ার আশঙ্কাও কম নয়।
বছর খানেক আগেই প্রায় দু’কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ড বাদ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাতে সাড়ে তিন-চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের দাবি করেছিল প্রশাসনের অন্দরমহল। বাকি প্রকল্পগুলিতেও অবৈধ দাবিদার খুঁজে বার করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম খরচসাপেক্ষ প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডার। যাতে সরকারি ভাবে ২.২১ কোটি উপভোক্তা রয়েছেন। খরচ প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। আবার মোট ২৮ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। তাতেও কমবেশি ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। এর পাশাপাশি, সবুজসাথী প্রকল্পে ১.২৬ কোটি, ঐক্যশ্রীতে ৪ কোটি, শিক্ষাশ্রীতে ১.০৪ কোটি উপভোক্তা রয়েছেন। এই প্রকল্পগুলিতেও মোট খরচ কম-বেশি ১০ হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পায় ২.৪৫ কোটি পরিবার। সরকারের দাবি, প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে ৬১ কোটি কর্ম দিবসও তৈরি হয়েছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ১.০৪ কোটি উপভোক্তার জন্য খরচ করা হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রকল্পগুলি মোটামুটি সবার। অর্থাৎ, এখানে আয়ের কোনও সীমা নেই। ন্যূনতম কিছু শর্ত মানা হলেই ভোটার এবং আধার কার্ডধারীরা এই সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকার পরেও এ দেশের ভোটার এবং আধার কার্ড পেয়েছেন অনেকেই। আবার এমন অনেক নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হচ্ছেন, যাঁদের যোগ্যতা সন্দেহেরঊর্ধ্বে নয়। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা শুরু করেছে কমিশন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভোটার বা আধার কার্ডের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশি কিছু নাগরিক সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলির আওতায় ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েননি তো! তাই বৈধতা যাচাই করে রেশন কার্ড বাতিলের মতো বাকি প্রকল্পগুলিতেও গভীর নজরদারি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের যুক্তি, নথি জোগাড় করে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের একাংশের কার্ড পাওয়ার নেপথ্যে স্থানীয় স্তরে কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের সহযোগিতা থাকা অসম্ভব নয়। তাই একই পদ্ধতিতে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা থাকছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
অবশ্য রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের দাবি, কোনও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির আগে উপভোক্তার যোগ্যতা যাচাই করা হয় একাধিক স্তরে। নথি ছাড়াও সশরীরে গিয়ে সমীক্ষা হয়। আবার সেই সব তথ্যের ভিত্তিতে এক-এক জন উপভোক্তার জন্য তৈরি হচ্ছে ‘ইউনিক ডকুমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (ইউডিআইএন— আবাস প্রকল্পের উপভোক্তাদের জন্য যা বাধ্যতামূলক হয়েছে)। ফলে উপভোক্তা তালিকায় অযোগ্যদের ঠাঁই হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এক সরকারি কর্তার কথায়, “উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনুদান পাঠানোর আগে বার বার যাচাই হয়। ন্যূনতম সন্দেহ তৈরি হলে টাকা পাঠানোর কাজ বন্ধ থাকে। তীব্র আর্থিক কষ্টের মধ্যেও রাজ্য প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে অর্থ অযোগ্য হাতে যাওয়া ঠেকাতে সরকার বদ্ধপরিকর।”