• 'মা আমি চুরি করিনি', কিশোরকে মিথ্যে অপবাদ সিভিক ভলান্টিয়ারের! চিঠি লিখে চিরঘুমে ছেলে...
    ২৪ ঘন্টা | ২৩ মে ২০২৫
  • কিরণ মান্না: সাদা পাতার এক কোণে অংক কষা। আর ঠিক মাঝখান দিয়ে লেখা নিজের নাম কৃষ্ণেন্দু দাস, সপ্তম শ্রেণি ও রোল নাম্বার ১৬। আর তারপরই খোপ কেটে হৃদয় নিংড়ে মা-কে লেখা দু'লাইনের ছোট্ট চিঠি। যার মূল কথা একটাই, "মা, আমি চুরি করিনি।" এক প্যাকেট 'কুরকুরে' নিয়ে যখন মিথ্যে চুরির অপবাদ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, তখন সে তার জীবনের পরম আশ্রয়, পরম ভরসার মাকে শুধু দুটো কথা-ই লিখতে পেরেছিল। সপ্তম শ্রেণির কৃষ্ণেন্দু মা-কে লেখে, "মা আমি বলে যাচ্ছি যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম চুরি করিনি।" আর তারপরই অপবাদে-অপমানে আত্মঘাতী হয় ওই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। 

    "মা, আমি চুরি করিনি" 


    মর্মান্তিক এই ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় বাজারের। এই ঘটনায় অভিযুক্ত একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। একটি চিপসের প্যাকেটকে ঘিরে এই ঘটনার সূত্রপাত। মিথ্যে চুরির অপবাদ, তারপর প্রকাশ্যে অপমান, শেষমেশ আত্মহত্যা— সব মিলিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল বছর ১৩-র কিশোর কৃষ্ণেন্দু দাস।

    ঘটনাটি ঠিক কী ঘটে?


    রবিবার কৃষ্ণেন্দু বাজারে কুরকুরে চিপস কিনতে বেরিয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, যে দোকানে গিয়েছিল, সেখানে দোকান খোলা রেখে দোকানদার চলে গিয়েছিলেন। দোকানে ছিলেন না। তখন দোকানের বাইরে পড়ে থাকা একটি চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে নেয় কৃষ্ণেন্দু। তার কাছে পয়সাও ছিল, পরে এসে সে দোকান মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিতকে দেবে ভেবেছিল। এরপর বাড়ি ফেরার পথেই দোকান মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিত, যিনি পেশায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ারও, তাঁর দোকানের চিপস 'চুরি' করে নিয়ে চলে যাচ্ছে বলে কৃষ্ণেন্দুকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন।

    মিথ্যে চুরির অপবাদ-অপমান


    অভিযোগ, শুভঙ্কর দীক্ষিত এরপর ওই কিশোরকে প্রকাশ্যেই চুরির অপবাদ দেন। কান ধরে ওঠবস করান। এমনকি মারধরও করেন। কৃষ্ণেন্দুর বাবা-মায়ের দাবি, চিপসের দাম সেইসময় তাঁদের ছেলে পরিশোধও করে দিয়েছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কৃষ্ণেন্দুর মা। অপমানিত অবস্থায় ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যান মা।

    অপমানে আত্মঘাতী কিশোর কৃষ্ণেন্দু


    কিন্তু চোর অপবাদ আর অপমান সহ্য করতে না পেরে এরপরই কৃষ্ণেন্দু মাকে চিঠি লিখে রেখে বাড়িতে থাকা কীটনাশক খেয়ে নেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় তমলুক মেডিকেল কলেজে। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

    অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি


    এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পরিবার ও এলাকাবাসী। অভিযুক্ত শুভঙ্কর দীক্ষিতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। একজন আইনের রক্ষক হয়ে কীভাবে ওই সিভিক ভলান্টিায়ার নিজেই আইন হাতে তুলে নিলেন? প্রশ্ন উঠছে। এমনকি দোকানে থাকা সিসিটিভি ফুটেজও পর্যন্ত দেখাতে রাজি হননি অভিযুক্ত শুভঙ্কর দীক্ষিত। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।

    Disclaimer: আপনি কি অবসাদগ্রস্ত? বিষণ্ণ? চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার হাত ধরতে তৈরি অনেকেই। কথা বলুন প্লিজ... 

    iCALL (সোম-শনি, ১০টা থেকে ৮টা) ৯১৫২৯৮৭৮২১

    কলকাতা পুলিস হেল্পলাইন (সকাল ১০টা-রাত ১০টা, ৩৬৫ দিন) ৯০৮৮০৩০৩০৩, ০৩৩-৪০৪৪৭৪৩৭

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)