জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো:
সদ্য একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন মা। ছেলের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সমাজের একাংশ কাঠগড়ায় তুলেছে মাকেই। এমতাবস্থায় স্ত্রীয়ের মন ভালো করতে ত্রিপুরার শান্তি কালী আশ্রমে ছুটলেন স্বামী। পুজো দিলেন ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে। ঈশ্বরের কাছে করজোড়ে স্ত্রীর জন্য স্বামীর প্রার্থনা 'ও জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। বাকি জীবনটা যেন শান্তিতে থাকতে পারে।'
এতক্ষন ধরে যাদের কথা বলছি, তাঁরা হলেন দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদার। বিয়ের ২৯ দিনের মাথায় রিঙ্কুদেবীর প্রথমপক্ষের একমাত্র সন্তান সৃঞ্জয় দাশগুপ্তকে হারান। সৃঞ্জয়ের মৃত্যুর পর সমাজের অধিকাংশ দায়ী করেন মাকেই। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পর দেখা যায়, সৃঞ্জয় আগে থেকে নানান রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ শারীরিক রোগভোগ।
এদিকে একমাত্র ছেলের মৃত্যু, তার উপর সামাজিক চাপে কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন দিলীপ-জায়া। এসবের মাঝেই স্ত্রীর মন পরিবর্তন করতে তাঁকে নিয়ে বুধবার ত্রিপুরায় গিয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বৃহস্পতিবার সাত সকালে যুগলে মিলে পৌঁছন ত্রিপুরার শান্তি কালী আশ্রমে। সেখানে প্রার্থনা সেরে আশীর্বাদ নেন 'পদ্মশ্রী' সম্মান প্রাপ্ত স্বামী চিত্ত মহারাজের কাছে। নিজের জন্য নয়, স্ত্রীর জন্যই আশীর্বাদ চান দিলীপ। সদ্য পুত্রহারা রিঙ্কু যেন শান্তিতে বাকি জীবনটা কাটাতে পারেন, প্রার্থনা করেন দিলীপ। তিনি বলেন, 'আশীর্বাদ করুন আমার স্ত্রীকে। জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে ও। একমাত্র সন্তান ছিল। কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে।' এরপর আশ্রম থেকে বেরিয়ে তাঁরা চলে যান ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে।
উল্লেখ্য, দিলীপ ও রিঙ্কুর বিয়ের একমাস কাটার আগেই, সম্প্রতি নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে রিঙ্কুর আগের পক্ষের ছেলে সৃঞ্জয়ের দেহ উদ্ধার হয়। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৃঞ্জয়ের অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা ছিল বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়। ছেলের ঠান্ডা শরীরে পাশে বিধ্বস্ত চেহারার রিঙ্কুর পাশে সেই সময় ঠায় ছিলেন দিলীপ।
তিনিও যে গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত, সেকথা নিজে মুখে জানিয়েছিলেন। সে সময় দিলীপ জানিয়েছিলেন, 'সৃঞ্জয়ের সঙ্গে আমার অনেকদিনের পরিচয়। একসঙ্গে খেলা দেখতে গিয়েছি। সৃঞ্জয়ের উপর মায়া পড়ে গিয়েছিল আমার আর পুত্রসুখ হল না, কিন্তু পুত্রশোক হয়ে গেল।'
প্রসঙ্গত দিলীপ ঘোষ, ৬২ বছরে এসে প্রথম বিয়ে করায়, প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েছেন। যদিও রিঙ্কু মজুমদার এর আগেও বিবাহিত ছিলেন একবার কিন্তু প্রথম স্বামীর মদ খেয়ে মারধোর করা সহ্য করতে না পেরে একমাত্র ছেলে প্রীতমকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন। অবশেষে ২০২৫ এর এপ্রিলে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষকে বিয়ে করেন।
রাজনীতির আগে তিনি একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরী করতেন। ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করা এই বিজেপি কর্মী রিঙ্কু মজুমদার, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ পরাজিত হওয়ার পর, তাঁর পাশে ছায়াসঙ্গীর মতো থেকেছিলেন।