জয়েন্ট এন্ট্রান্স: নতুন ওবিসি প্যানেল তৈরির নির্দেশ হাই কোর্টের, কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ নয় ২০১০ পরবর্তী শংসাপত্রে
আনন্দবাজার | ২২ মে ২০২৫
গত বছরের জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেডিক্যাল-স্নাতকোত্তর) পরীক্ষায় অন্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) পরীক্ষার্থীদের নতুন প্যানেল তৈরি করতে বলল কলকাতা হাই কোর্ট। ২০২৪ সালে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের একাংশ কাউন্সেলিংয়ে ডাক পাননি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে মামলা গড়ায় হাই কোর্টে। বুধবার ওই মামলায় বিচারপতি কৌশিক চন্দ নির্দেশ দিয়েছেন, স্নাতকোত্তর স্তরের ওই পরীক্ষায় ওবিসিদের নতুন প্যানেল তৈরি করতে হবে।
হাই কোর্ট জানিয়েছে, ওই নতুন প্যানেল মেনেই কাউন্সেলিং এবং ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে ২০১০ সালের পরে ওবিসি শংসাপত্র হয়েছে, এমন পরীক্ষার্থীরা কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ পাবেন না। তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন কাউন্সেলিং করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বস্তুত, ২০১০ সালের পর থেকে রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। তবে হাই কোর্টের রায়ের উপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই।
২০২৪ সালে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর স্তরের ওই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা নিয়ে আদালতে মামলা করেন মামনি সাউ-সহ বেশ কয়েক জন। মামলাকারীদের বক্তব্য, তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার জন্যও নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা কেউই কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডাক পাননি বলে অভিযোগ। মামলাকারীদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী এবং সৈকত ঠাকুরতা। মামলাকারী পক্ষের অভিযোগ, তাঁরা কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারেননি। ফলে কোনও মেডিক্যাল কলেজে তাঁরা ভর্তি হতে পারছেন না। এরই মধ্যে ২০২৫ সালেরও ভর্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বুধবার মামলার শুনানিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের ডিরেক্টরকে দু’ঘণ্টার মধ্যে এজলাসে হাজিরার নির্দেশ দেয় বিচারপতি চন্দের বেঞ্চ। ওই আধিকারিকেরা আদালতে গিয়ে জানান, ২০১০ সালের পর থেকে সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হওয়ার কারণে কাউন্সেলিং করা যায়নি। সে কথা শুনে বিচারপতি চন্দ জানান, ২০১০ সালের আগের ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সেখানে ৬৬টি সম্প্রদায় ওবিসি তালিকাভুক্ত ছিল। তাঁদেরকে নিয়েই নতুন প্যানেল তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
আদালতের নির্দেশ, রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে সকল ওবিসি (এ) এবং ওবিসি (বি) পরীক্ষার্থীর থেকে শংসাপত্রের প্রতিলিপি চেয়ে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের নিজেদের ওবিসি শংসাপত্রের প্রতিলিপি পোর্টালে আপলোড করতে বলতে হবে। পরীক্ষার্থীরা যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন, সেই মোবাইল নম্বরে এসএমএসও করেও এ বিষয়ে জানানো হবে।
হাই কোর্টের নির্দেশ, এর পর, পুরনো প্যানেল বাতিল করে ২০১০ সালের আগের ওবিসি শংসাপত্র থাকা পরীক্ষার্থীদের নতুন প্যানেলে যুক্ত করতে হবে। বাকিরা বাদ যাবে। ৭ শতাংশ আসন ওবিসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা যাবে। গোটা প্রক্রিয়া ৪০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালত আরও জানিয়েছে, নতুন করে প্যানেল তৈরির পরে অবিলম্বে রাজ্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকা পাঠিয়ে দিতে হবে। মেধাতালিকা পাওয়ার এক মাসের মধ্যে কাউন্সেলিং শেষ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে।
ওবিসি সংক্রান্ত বিষয়ে মূল মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল ২০১০ সালের পরের ওবিসি সার্টিফিকেট কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তাই এখানে কাউন্সেলিং করতে হলে সেই নির্দেশ মেনেই করতে বলেছে আদালত।”