• এই অভিযানে ভুল মানেই মৃত্যু,বলছেন সৌমেন
    আনন্দবাজার | ১৮ মে ২০২৫
  • প্রতি পদে বিপদ। কোনও ভুল হলে মৃত্যুর হাতছানি। সে সব বাধা পেরিয়ে এভারেস্টের শিখরে পৌঁছতে পারার জন্য কঠোর প্রস্তুতি ও পরিশ্রমকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন বর্ধমানের বাসিন্দা সৌমেন সরকার। বৃহস্পতিবার এভারেস্ট জয় করে শুক্রবার তিনি ফিরেছেন বেস ক্যাম্পে। সেখান থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমি সুস্থ আছি। কুড়ি বছর ধরে পর্বতারোহণ করছি। বড় স্বপ্ন পূরণ হল।’’

    বর্ধমান শহরের বাসিন্দা, বছর চুয়ান্নর সৌমেন পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার। এর আগে একাধিক শৃঙ্গে আরোহণ করেছেন। এভারেস্টে পৌঁছতে ১ এপ্রিল বর্ধমান থেকে রওনা দেন তিনি। ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু পৌঁছন। সেখান থেকে বেস ক্যাম্প রওনা দেন ৭ এপ্রিল। ১৪ এপ্রিল পৌঁছে যান সেখানে। সৌমেন জানান, সেখানে বরফে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ হয়। তার পরে ২১ এপ্রিল গাইডের সঙ্গে অভিযানে বেরোন। খুম্ভু হিমবাহ, ক্যাম্প ১, ক্যাম্প ২ এবং ক্যাম্প ৩ ছুঁয়ে আবার বেস ক্যাম্পে ফিরে আসেন ২৪ এপ্রিল। তার পর থেকে বেস ক্যাম্পে অপেক্ষা করছিলেন, কবে এভারেস্টের পথ খুলবে, সে জন্য। ১০ মে সেই সুযোগ আসে। ১১ মে বেস ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পড়েন। ধাপে ধাপে উপরে পৌঁছে, সর্বোচ্চ শিখরে ওঠার অভিযান শুরু করে ১৪ মে রাত ৮টা নাগাদ। তাঁর কথায়, ‘‘১৫ মে নেপালের সময় অনুযায়ী সকাল পৌনে ৭টায় এভারেস্টের শিখরে পৌঁছে যাই।’’

    সৌমেন জানান, এই অভিযানে পদে পদে ছিল বিপদের আশঙ্কা। তীব্র ঠান্ডা, সঙ্গে হাড় কাঁপানো হওয়া। মাঝে মাঝে তুষারঝড়। তাঁর কথায়, ‘‘হিলারি’স স্টেপের পরে পথ আরও বিপদসঙ্কুল হয়ে যায়। খুব সাবধানে পা ফেলতে হয়েছে। এভারেস্টে ওঠার জন্য প্রচুর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। অনেকে হয়তো ভাবেন, টাকা থাকলেই এভারেস্টে যাওয়া যায়। সে ধারণা ভুল। এখানে পর্বতারোহণের যাবতীয় কলাকৌশল ব্যবহার করতে হয়। ভুলের কোনও ক্ষমা নেই। তেমন হলে মৃত্যু অবধারিত।’’

    সৌমেন জানান, অভিযানে দু’জনের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। এক জনের দেহ দেখে এসেছেন ক্যাম্প ৪ থেকে ফেরার সময়ে। তিনি বলেন ‘‘ওঠার সময়েও দু’জনের দেহ পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। সম্ভবত গত বছর মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। আমাদের সঙ্গে যাঁরা গিয়েছিলেন, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেককে হেলিকপ্টারে নামিয়ে আনা হয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি এই অভিযানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। তাই সফল হয়েছি। তবে মৃতদেহ দেখে মন ভারাক্রান্ত। দ্রুত নেমে যেতে চাইছি।’’

    শনিবার সকালে বেস ক্যাম্প থেকে নামতে শুরু করেছেন সৌমেন। তিনি জানান, কাঠমান্ডু পৌঁছতে তিন দিন সময় লাগবে। বর্ধমানে পৌঁছবেন ২৫ মে-র আশপাশে। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ব বর্ধমানে সম্ভবত আমিই প্রথম পর্বতারোহী, যে প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পৌঁছলাম!’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)