তেলের ঘানিতে কাটা পড়ে দু-টুকরো হয়েছিল ডানহাত! জোড়া লাগাল SSKM
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৮ মে ২০২৫
আবারও একবার কার্যত অসাধ্য সাধন করে দেখালেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ঠিক মতো সংরক্ষণ না করা সত্ত্বেও, গ্লোডেন আওয়ার পেরিয়ে যাওয়ার পরও এক যুবকের দু'টুকরো হয়ে যাওয়া হাত ফের জোড়া লাগিয়ে দিলেন তাঁরা! প্রায় দেড়মাস কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল ওই যুবক তাঁর বাড়িতে ফিরে যান। যদিও তাঁকে আরও কয়েকটি অস্ত্রোপচার করাতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য বলছে, হাত কাটা যাওয়া ওই যুবকের নাম কৌশিক ঘোষ। ৪১ বছরের কৌশিক বর্ধমানের চাঁচাইয়ের বাসিন্দা। তিনি বিভিন্ন ধরনের মেশিনপত্র সারাই করে জীবিক নির্বাহ করেন।
গত ২১ মার্চও কাজে গিয়েছিলেন কৌশিক। তাঁর এলাকারই একটি তেলকলে ঘানি সারাচ্ছিলেন তিনি। কৌশিকের ডানহাতে একটি স্টিলের বালা ছিল। সেটি তাঁর কবজির কাছে নেমে আসে এবং ঘানির একটি নাটবল্টুর সঙ্গে আচমকা আটকে যায়। এর ফলে এক টানে কৌশিকের হাত ঘানির ভিতর ঢুকে যায়। এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটি কনুইয়ের নীচ থেকে কেটে যায়! কাটা যাওয়া হাতটি সেখানেই মেঝেয় পড়ে যায়।
এমন ঘটনা ঘটলে হয়তো অনেকেই জ্ঞান হারাবেন। কিন্তু, কৌশিক তখনও মানসিকভাবে অত্যন্ত ধীর, স্থির ছিলেন। তিনি শুনেছিলেন, দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারলে কাটা হাত জোড়া দেওয়া যায়। তাই কাটা হাতটি একটি ব্য়াগে পুরে এবং কনুইয়ের কাছে কাপড় জড়িয়ে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে যান তিনি। কৌশিককে সেখানে নিজের বাইকের পিছনে বসিয়ে নিয়ে যান তেলকলের মালিক।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কৌশিককে দ্রুত কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেদিনই ভাই সৌভিকের সঙ্গে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল এবং তারপর এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ারে পৌঁছন কৌশিক ও সৌভিক।
এখানে সমস্যা ছিল মূলত দু'টি। প্রথমত, কাটা পড়া প্রত্যঙ্গ পুনরায় শরীরের সঙ্গে জোড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হয় ঘটনা ঘটার ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে। কিন্তু, কৌশিকের ক্ষেত্রে সেই সময়ের অধিকাংশ পেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, কাটা যাওয়া অংশ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। সেই প্রক্রিয়া কৌশিকের জানা ছিল না। তাই অপারেশনে বিরাট ঝুঁকি ছিল।
সেকথা কৌশিক ও তাঁ পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়। তারপর ঝুঁকি নিয়েই এসএসকেএম-এর প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক তীবর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল একটানা প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে কাটা যাওয়া হাতটি জোড়া লাগায়। ধমনী, শিরা, স্নায়ু, হাড় সবকিছু জোড়া লাগানো হয়। এরপর সাতদিনের জন্য কৌশিককে আইটিইউ-তে রাখা হয়। কিন্তু, সেই সময় হঠাৎ সংক্রমণের জেরে হাতের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সেই সংক্রমণ রুখে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ এপ্রিল কৌশিকের বাঁ পায়ের ঊরু থেকে টিসু, মাংস, চামড়া নিয়ে প্রায় ছ'ঘণ্টার আরও একটি অস্ত্রোপচার করা হয় এবং সেগুলি ডানহাতে প্রতিস্থাপিত করা হয়।
ইতিমধ্যেই কৌশিকের ডানহাতের কাটা অংশে রক্ত চলাচল করতে শুরু করেছে। অর্থাৎ - সেটি বেঁচে গিয়েছে। তবে, হাতের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরতে সময় লাগবে। তার আগে আরও কয়েকটি ছোট অস্ত্রোপচার করতে হবে।