• ভোটে কারচুপি? শঙ্কায় বিরোধীরা
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে ১৯ এপ্রিল। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ১১ দিন। হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। এতদিনেও কত শতাংশ ভোট পড়ল, সেটা সঠিকভাবে জানিয়ে উঠতে পারেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে মঙ্গলবার তুমুল হইচই শুরু করে বিরোধীরা। লাগাতার চাপের মুখে শেষপর্যন্ত সন্ধ্যায় কমিশনের বোধোদয় হল। একসঙ্গেই প্রকাশিত হল দু’দফার ভোটদানের চূড়ান্ত হার। কমিশন জানাল, প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ ও দ্বিতীয় দফায়  ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটগ্রহণের দিন সন্ধ্যা সাতটায় দেওয়া প্রাথমিক হিসেবে অবশ্য এই দুই হার ছিল যথাক্রমে ৬০ ও ৬০.৯৬ শতাংশ। দু’টি পরিসংখ্যানের ফারাক প্রায় ৬ শতাংশের। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না। উভয় পরিসংখ্যানের ফারাক থাকে সামান্যই। কিন্তু এক্ষেত্রে তা না হওয়ায় লোকসভা ভোটে কারচুপির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিরোধী শিবিরে। তাদের দাবি, আগে ভোট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই তথ্য প্রকাশ করা হতো। এবার তাতে সময় লেগে গেল ১১ দিন। এমনটা নজিরবিহীন। কেন লাগল এত সময়? সেই প্রশ্নও তুলেছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিরা।

    এবারের লোকসভা ভোটে কমিশনের কাজে নজিরবিহীন অনেক কিছুই অবশ্য ধরা পড়ছে। যেমন, প্রতিটি আসনে মোট নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত তথ্য নেই তাদের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে। বুথ ভিত্তিক তালিকা অবশ্য আছে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাবড় ভোট বিশেষজ্ঞ থেকে বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোট বিশেষজ্ঞের মতে, কোনও সংসদীয় আসনে নথিভূক্ত ভোটারের সংখ্যা জানা না থাকলে ভোটদানের হারের কোনও অর্থই নেই। অথচ বছরদশেক আগেও এই তথ্যগুলি চাইলেই পাওয়া যেত। ঠিক এই প্রশ্নটিই তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, এতে তো গণনার সময় নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যায় গরমিলের সম্ভাবনা যথেষ্ট। অর্থাৎ, কারচুপির আশঙ্কা থাকছেই। এমনকী প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ভোটদানের হারের ফারাক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

    বিষয়টি নিয়ে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর প্রশ্ন, ‘দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের চারদিন বাদে চূড়ান্ত ভোটদানের হার প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। চারদিন আগে প্রকাশিত প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে তা লাফিয়ে ৫.৭৫ শতাংশ বেড়েছে। এটা কি স্বাভাবিক?’ এনিয়ে ডেরেক কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকেও। লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করে দিতে সংসদে আইন পাল্টে ফেলেছেন মোদি। কমিশনের তো প্রতি দফা ভোটের পর সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা। সেটাই বা হচ্ছে না কেন?’ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, শিবসেনা (উদ্ধব) প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও সমস্বরে কমিশনের ভূমিকার নিন্দা করেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, কোথাও কোনও কারচুপি হচ্ছে না তো? এবিষয়ে যাবতীয় সন্দেহ দূর করতে কমিশনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এনসিপি (শারদ পাওয়ার) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রথম দু’দফায় পরাজয়ের আভাস পেয়েছেন মোদি। সেই কারণেই এধরনের নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে এদিনের হইচইয়ের পর পরবর্তী দফাগুলিতে কমিশনের এমন নিষ্ক্রিয়তা বজায় থাকে কি না, সেটাই দেখার!
  • Link to this news (বর্তমান)