• ভোটে হামলা রুখতে জঙ্গলমহলে ‘টহল’ ১৪০টি হাতির, প্রস্তুতি বনদপ্তরের
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৪
  • অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: রক্তপাত, ল্যান্ডমাইন, বারুদের গন্ধ এখন অতীত। জঙ্গলমহলে নেই মাওবাদী আতঙ্ক। কিন্তু, চলতি লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ‘হামলার ছক’। তবে তা মাওবাদী হামলা নয়, ভয়টা বন্যপ্রাণীর হামলার। 

    বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর মিলিয়ে জঙ্গলমহলে প্রায় ১৪০টি হাতি ‘টহল’ দিচ্ছে। আপাতত তারা নিরাপদ দূরত্বে জঙ্গলের গভীরেই রয়েছে। তবু লোকসভা ভোটের সময় এই বণ্যপ্রাণীদের হামলা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে বনদপ্তর। নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে হাতিদের গতিবিধির উপর। ভোটের দিন জঙ্গলের প্রত্য‌ন্ত অঞ্চলে ভোটারদের পাহারাও দেবেন বনদপ্তরের কর্মীরা।

    জঙ্গলমহলে হাতি-মানুষের সংঘর্ষ লেগেই থাকে। ফি বছর ঝাড়খণ্ডের দমলা রেঞ্জ থেকে বহু হাতি এরাজ্যের বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঢুকে পড়ে। হাতির হানায় অনেক মানুষের মৃত্যুও হয়। জঙ্গলমহলের বহু বুথ রয়েছে একেবারে জঙ্গল এলাকায়। সেখানে হাতির উপদ্রব নিয়ে ভয় থাকে সবসময়। হাতি-মানুষের সংঘর্ষ ঠেকাতে ২০১০ সালে বনদপ্তরের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। সেই বাহিনীও কাজ করছে সেখানে। এখন ক্যামেরার মাধ্যমে রিয়েল টাইম মনিটরিংও করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও হাতির হামলা পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। ২৫ মে জঙ্গলমহলে ভোট। তাই হাতির জন্য একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছে বনদপ্তর।

    বনদপ্তর সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর মাসে দলমা রেঞ্জ থেকে ৬৯টি হাতির একটি বড় পাল তিনধাপে বাঁকুড়া ডিভিশনের জঙ্গলে ঢুকেছিল। গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের পুনরায় ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। তবে, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে হাতি রয়েছে এখনও প্রায় ১৪০টি। 

    সোমবার বাঁকুড়া ডিভিশনে তিনটি, পশ্চিম মেদিনীপুর ডিভিশনে ৭০টি, রূপনারায়ণ বন বিভাগে তিনটি এবং ঝাড়গ্রাম ডিভিশনে ৩৯টি হাতি শনাক্তও করা গিয়েছে। প্রতিদিন হাতির গতিবিধির উপর বনদপ্তর এমনভাবে নজর রাখছে, যাতে হাতির দলের অবস্থান সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করা যায়। বনদপ্তর জানিয়েছে, যেখানে ভোটকেন্দ্র তৈরি হবে, তার চার-পাঁচ কিমির মধ্যে হাতিদের কোনও গতিবিধি পরিলক্ষিত হলেই তাদের নিরাপদ দূরত্বে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

    রাজ্য বনদপ্তরের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলান ডাইভেল বলেন, জঙ্গলমহলে ১৪০টি হাতির সবগুলিই রয়েছে গভীর জঙ্গলে। জনবসতির কাছাকাছি কোনও হাতি নেই। তবুও নির্বাচনের সময় যাতে কোনও হামলা বা দুর্ঘটনা না-ঘটে, তার জন্যই আমরা নজর রাখছি। দ্বিতীয়ত, পশ্চিম মেদিনীপুরের দিক থেকে যাতে নতুন করে হাতি বাঁকুড়ায় না-ঢোকে, তার জন্য ‘এলার্ট’ জারি করা হয়েছে। ভোটপর্ব নির্বিঘ্নে পার করতে যে-সমস্ত পদক্ষেপ করা দরকার, তার সবই আমরা করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)