• মোদি মিথ্যাবাদী: মমতা
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৪
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় ও উমার ফারুক, মালদহ: প্রত্যেক দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা, বছরে দু’কোটি চাকরি, প্রত্যেকের মাথায় ছাদ, কৃষকদের দ্বিগুণ আয়, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ সহ আরও কত কিছু! গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া এহেন গুচ্ছ প্রতিশ্রুতির কোনটা রূপায়িত হয়েছে? অন্ধ-ভক্ত ছাড়া গোটা দেশবাসীর উত্তর—এর একটাও নয়! মোদির দেওয়া প্রতিশ্রুতি ঝুটা, মিথ্যা। এককথায় জুমলা। প্রতিশ্রুতি বিতরণ আর রূপায়ণের মাঝের এই বিস্তর ফারাকই মোদিকে মিথ্যাবাদী বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে মনে করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মালদহে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে হরিশচন্দ্রপুর এবং পুরাতন মালদহে দু’টি নির্বাচনী সভা করেন মমতা। দু’টি সভা থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানায় বিঁধে তাঁর তোপ—‘মোদিজি শুধু মিথ্যা বলেন। ঝুটা পাবলিসিটি করেন। উনি মিথ্যাবাদী।’ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘১৫ লক্ষ টাকা কেউ পেয়েছেন? পাননি। ঘর দেবে বলেছিলেন, পেয়েছেন? পাননি। বছরে দু’কোটি চাকরি হয়েছে? হয়নি। বরং কর্মচ্যুতি ও কর্মসঙ্কোচনের যে ভয়াবহ কোপ দেশের উপর পড়েছে, তা ৪৫ বছরে এই প্রথম। আমরা যাঁদের চাকরি দিচ্ছি, ওরা (বিজেপি) তা খেয়ে নিচ্ছে। আর মূল্যবৃদ্ধি! কী হাল, তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন গোটা দেশের মানুষ।’ 

    গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কোন কাজ সাধারণের উপকারে এসেছে? এই প্রশ্নে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বেকারত্ব কমানো, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ মোদি সরকার—কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, বিরোধীদের একটাই অভিযোগ। সাধারণ মানুষের জন্য কী কী করেছেন প্রধানমন্ত্রী? গেরুয়া শিবিরের অন্ধ-ভক্তরা বলছেন—‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার কাহিনি, অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার গল্প, জি-২০ সম্মেলনের সফল আয়োজন, আর পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার সাফল্য কাহিনি! তাই তৃণমূল সুপ্রিমোর আক্রমণ—‘ওরা (বিজেপি) একটাই কথা জানে, যত পারো মিথ্যা বলে নাও। হিটলারের প্রচার সচিব গোয়েবেলসের কায়দায় ভাবছে, একটা মিথ্যা বারবার বললে তা সত্যে পরিণত হবে।’ নাম না করে গেরুয়া শিবিরের ‘পোস্টার বয়’কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ—‘ভাঁওতা একবারই হয়, বারবার হয় না। মানুষ আপনার মিথ্যা ধরে ফেলেছে, বুঝে গিয়েছে পুরোটাই জুমলা! সঙ্গে এটাও বুঝেছে, আপনার গ্যারান্টি মানে দেশ বেচার গ্যারান্টি। সংবিধান, ঐক্য-সংহতি ধ্বংসের গ্যারান্টি!’ 

    রাজ্যে প্রচারে এসে মিথ্যার বেসাতি করছেন বিজেপি নেতারা, এই অভিযোগ বারবার করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই প্রসঙ্গে এদিন মেমারিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আনা ‘অভিযোগে’র উত্থাপন করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘অমিত শাহ বলেছেন, বাংলা নাকি ২ লক্ষ ২৯ হাজার কোটি টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দেয়নি! সেই কারণেই নাকি কেন্দ্র টাকা দেয় না?’ দৃশ্যত ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার—‘অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ, একটা ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পড়ে নেই। সিপিএমের দায়িত্ব নেব না। বিজেপি তুমি সেটা ঠিক করো। আমি আমাদের কথা বলব।’ সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘ক্যাগ রিপোর্টে বলছে, কেন্দ্রের ৩২টি বিভাগ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দেয়নি। আয়নায় আগে নিজের মুখ দেখুন।’

    মালদহের যে দু’টি কেন্দ্রে তৃণমূল এবার জোরদার লড়াই চালাচ্ছে, তার ফলাফলে বড় ভূমিকা রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের। এই জেলায় দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেই ত্রিমুখী লড়াই। এহেন মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতার সতর্কবার্তা—‘বিজেপি জিতলে সিএএ হবে, এনআরসি হবে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিও কার্যকর করবে। তাই সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে দেবেন না।  এখানে কংগ্রেস, সিপিএম মিলে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে চাইছে। সতর্ক থাকুন। ওদের ভোট দেবেন না।’
  • Link to this news (বর্তমান)