• এনআইটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার মৃত্যুতে গাফিলতি! চাপে পড়ে ‘ইস্তফা’ ডিরেক্টরের
    বর্তমান | ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: উচ্চশিক্ষায় কেন্দ্রের ‘কস্ট কাটিং’ নীতির জেরেই কী প্রাণ গেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার? দুর্গাপুর এনআইটিতে ছাত্রমৃত্যু নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতির মাঝেই এই প্রশ্ন উঠছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, পাঁচ হাজার পড়ুয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা মেডিক্যাল ইউনিটের স্বাস্থ্য পরিষেবা লাটে তুলে দেওয়া হয়েছে। রবিবার অ্যাম্বুলেন্স আসতেই লেগে যায় ২০মিনিট। তার জেরেই মৃত্যু হয় অর্পণ ঘোষ নামে ওই পড়ুয়ার। তাঁর মৃত্যুর পরই রবিবার রাতেই এনআইটির ডিরেক্টর অরবিন্দ চৌবেকে টেনে হিঁচড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের চাপে হাতে লেখা ইস্তফাপত্রও দেন। যদিও তার সত্যতা এখনও স্বীকার করেনি এনআইটি কর্তৃপক্ষ। সোমবারও এনআইটি চত্বরজুড়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। সংস্থার অধিকর্তার ‘হিটলারি’ মনোভাবে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী থেকে পড়ুয়ারা।

    দুর্গাপুর এনআইটিতে যেন ‘ত্রি ইডিয়েটস’ সিনেমার বাস্তব চিত্র। সিনেমায় ভিরু সহস্রবুদ্ধের চাপে পড়ুয়াদের নাজেহাল দশা ছিল। পড়ার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে এক পড়ুয়া। তখন র‌্যাঞ্চো প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তাকে বলেছিলেন, ‘এটা আত্মহত্যা নয়, মার্ডার।’ রবিবার রাতে ঠিক একই অভিযোগ শোনা গেল দুর্গাপুর এনআ‌ই঩টির পড়ুয়াদের মুখে। অত্যন্ত শান্ত ও নম্র স্বভাবের অর্পণের দু’টি পৃথক বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পড়ুয়াদের দাবি, শুধুমাত্র আই কার্ড না আনার জন্য প্রথম পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। তারপর একাই হস্টেলে ফিরে আসেন তিনি। বাবাকে ফোন করে বলেন, পরীক্ষা ভালো হয়নি। বাবা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করায় ফোন কেটে দেন। দুপুর ১২টায় বন্ধুরা হস্টেলে ফিরে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। অভিযোগ, তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল ইউনিটে নিয়ে গেলেও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। ছিল না অ্যাম্বুলেন্সও। ২০ মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্স এলে অসুস্থ পড়ুয়ার আই কার্ড দেখতে চাওয়া হয় বলেও অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে পড়ুয়াকে মৃত ঘোষণা করতেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। ডিরেক্টরকে দুপুর থেকে অডিটোরিয়ামে আটকে রাখা হয়। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। তারপরই তাঁর পদত্যাগপত্র ভাইরাল হয়। 

    সোমবারও অধিকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে সব মহলে। কর্মচারী সমিতি দফায় দফায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, কস্ট কাটিংয়ের নামে মেডিক্যাল ইউনিটে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। আগে শনি ও রবিবার প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকা পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য বাইরে থেকে চিকিৎসক আনা হতো। সেটা তাঁর আমলেই তুলে দেওয়া হয়েছে। কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোকুলবিহারী নন্দ বলেন, কস্ট কাটিংয়ের নামে উনি আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা তুলেই দিয়েছেন। হয়তো তার পরিণতিতেই ওই পড়ুয়ার মৃত্যু। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অভিজিৎ সাহা বলেন, মৌখিক অর্ডার দিয়ে এত বড় প্রতিষ্ঠানে উনি একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন। গবেষকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গবেষণার স্বার্থে বছরে ১০কোটি টাকার যন্ত্রাংশ কেনার কথা। কিন্তু কেনা হয়েছে মাত্র ১৯লক্ষ টাকার। অরবিন্দবাবু বলেন, পড়ুয়ারা মারধরের হুমকি নিয়ে জোর করে সই করিয়েছে। আমার আমলেই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। পড়ুয়াদের জন্য বিমাও করে দিয়েছি। এনআইটির মুখপাত্র শ্রীকৃষ্ণ রায় বলেন, আমরা মৃত পড়ুয়ার ময়নাতদন্ত নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। এনিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। 

    মৃতের বাবা পেশায় শিক্ষক অশোককুমার ঘোষ বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে ন্যূনতম অক্সিজেন পরিষেবাটুকু ছিল না। তা থাকলে হয়তো ছেলেটা বেঁচে যেত। অর্পণের অভিন্নহৃদয় বন্ধু তথা টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আয়ুশ বাগ বলেন, ‘অর্পণের মতো প্রাণবন্ত একটি ছেলে নেই, ভাবতেও পারছি না। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা উচিত।’
  • Link to this news (বর্তমান)