• উন্নয়নে সাফল্যের দাবি বিজেপির, পুরোটাই চমক বলছে হাত শিবির
    বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • গুয়াহাটি: ছোট্ট ছাউনির নীচে বসে ৭০ বছরের বৃদ্ধা বন্টি কোনওয়ার। ঘোলাটে চোখে শূন্যতা। গুয়াহাটি শহরের উপকণ্ঠ বারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তিনি। এই তো সেদিনও নিজেদের মাথায় ছিল পাকাবাড়ির ছাদ। স্বামী নরেশ্বরকে নিয়ে সুখের সংসার। সেসব এখন যেন স্বপ্নের মতো মিলিয়ে গিয়েছে। নেপথ্যে বছর দু’য়েক আগে সিলসাকো বিল (জলাশয়) পুনরুদ্ধারের নামে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বারোশোর বেশি বাড়ি। জবরদখল করে ওই বাড়িগুলিতে তৈরি করা হয়েছিল বলে প্রশাসনের দাবি। কিন্তু বান্টিদের মতো ঘরহারারা সেই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, জমি দখল কোথায়? তাঁরা এখানকার আদি বাসিন্দা। তাঁদের কাছ থেকে তো নিয়মিত করও আদায় করা হত। এখানকার ধনী ও প্রভাবশালীদের বাড়িতে কিন্তু হাত পড়েনি। তাঁদের মতো গরিব মানুষের বাড়িই ভাঙা হয়েছে। বিজেপি সরকার তাঁদের স্বার্থ দেখছে না বলে অভিযোগ ওই বাস্তুচ্যূতদের। এর জবাব  তাঁরা ভোটের বাক্সেই দিতে বদ্ধপরিকর।  তাঁদের স্পষ্ট কথা, ‘এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেব। কিন্তু কোনও মতেই  বিজেপিকে ভোট দেব না।’  যদিও প্রশাসনের দাবি, যা করা হয়েছে সব গুয়াহাটির উন্নয়নের স্বার্থে। আর গুয়াহাটি লোকসভা আসনে বিজেপি এই উন্নয়নকেই হাতিয়ার করছে। গেরুয়া শিবিরের দাবি, গুয়াহাটি কেন্দ্রের বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। যেটুকু বাকি রয়েছে, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার সেটাও করে ফেলবে। অন্যদিকে, বিরোধী কংগ্রেসের দাবি, সবটাই চমক। 

    গোয়ালপাড়া, কামরূপ ও কামরূপ মেট্রো-এই তিন জেলার দশটি বিধানসভা কেন্দ্র গুয়াহাটি লোকসভা আসন। সংবিধান সভার অন্যতম সদস্য রোহিণীকুমার চৌধুরী, প্রজা সোসালিস্ট পার্টির হেম বড়ুয়া, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী দীনেশ গোস্বামীর মতো একাধিক হেভিওয়েট এই আসন থেকে জিতেছেন। ২০০৯ সাল থেকে গুয়াহাটি বিজেপির দখলেও রয়েছে। তবে এবার গতবারের সাংসদ কুইন ওজার বদলে পদ্মশিবির প্রার্থী করেছে বিজুলি কলিতা মেধিকে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের মীরা বরঠাকুর গোস্বামী। তিনি একটা সময় ছিলেন  বিজেপিতেই। ২০১৯ সালে কংগ্রেসকে ৩ লক্ষ ৪৫ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছিল বিজেপি। ভোটের প্রচারে সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরছেন বিজেপি প্রার্থী। গুয়াহাটি শহরে পানীয় জল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা থেকে শুরু করে বন্যা মোকাবিলাতেও সাফল্যের দাবি করেছেন তিনি। যদিও কংগ্রেস প্রার্থী মীরা প্রতিপক্ষের এই দাবি মানতে নারাজ।  তাঁর অভিযোগ, সব বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া যায়নি। গ্রামীণ এলাকায় সমস্যা তো আরও গভীর। সম্প্রতি গুয়াহাটি সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় জায়গা পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি ও মহিলা সুরক্ষা নিয়েও ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে নিশানা করেছেন মীরা। তিনি বলেছেন, রান্নার গ্যাসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। যার জেরে হিমশিম খেতে হচ্ছে মহিলাদের। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেবই বলছে, গুয়াহাটি শহর মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত নয়। অসমের ভূমিপুত্ররা যাতে জমির অধিকার পান, তা নিয়েও লড়তে চান তিনি। লড়াই কঠিন, তবে হাল ছাড়তে নারাজ মীরা
  • Link to this news (বর্তমান)