• কম সুদ দেওয়া হচ্ছে পিপিএফে, কেন্দ্রকে তোপ আরবিআইয়ের
    বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: মূল্যবৃদ্ধির চড়া আঁচে পুড়ছে দেশ। তবে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের উপর সুদের হার কিছুটা বৃদ্ধি করায় খানিক সুরাহা পেয়েছেন আম জনতা। এমনকী, কেন্দ্রের হাতে যে ক’টি সঞ্চয় প্রকল্প আছে, সেগুলির সিংহভাগ ক্ষেত্রেও সুদের হার বেড়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড। দুয়োরানিও বলা চলে। কারণ, স্বল্প সঞ্চয়ের অন্যতম জনপ্রিয় এই স্কিমে সুদের হার বাড়েনি দীর্ঘকাল। তা আটকে আছে ৭.১ শতাংশেই। যা নিয়ে কেন্দ্রকে কার্যত তোপ দাগল আরবিআই। চলতি মাসে প্রকাশিত মাসিক বুলেটিনে তারা বলেছে, পিপিএফ এবং পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে যে সুদ দেওয়া হচ্ছে, তা কম। 

    কিষাণ বিকাশপত্র, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, মেয়াদি আমানতের মতো সরকারি স্কিমগুলি ডাকঘর এবং ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বিক্রি হয়। তবে তা নিয়ন্ত্রণ করে অর্থমন্ত্রক। এই প্রকল্পগুলিতে প্রতি তিন মাস অন্তর সুদ ঘোষণা করা হয়। গত জানুয়ারি থেকে যে সুদের হার ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি সুদ পাচ্ছেন প্রবীণ নাগরিকরা। বার্ষিক ৮.২ শতাংশ হারে। একই হার সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনাতেও। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটে ৭.৭, এমআইএসে ৭.৪, পাঁচ বছরের মেয়াদি আমানতে ৭.৫ শতাংশ সুদ মিলছে। তবে পিপিএফে সেই হার ৭.১ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে তা ৬.৭ শতাংশ। আগামী জুন মাস পর্যন্ত এই হারেই সুদ মিলবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।

    ভারতের মতো দেশে সামাজিক সুরক্ষার নিরিখে সাধারণ মানুষের বলভরসা পিপিএফের সঞ্চয়। সেখানে কম সুদ থাকলে তা মানুষকে অসুরক্ষিত  ও ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চয়ের দিকে ঠেলে দেবে বলে মনে করেন মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায়। তাঁর কথায়, ‘পিপিএফ বা অন্যান্য স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ কম হওয়ার অর্থ চিটফান্ডকে রমরমার সুযোগ করে দেওয়া।’ ভারত চেম্বার অব কমার্সের সচিব অভীক রায়ের কথায়, ‘সরকারি লগ্নিপত্রে যেমন রিটার্ন বেড়েছে, সেখানে ব্যাঙ্কও আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সুদের হার বাড়েনি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে। সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াতেই সেই সুদ বাড়ানো জরুরি।’ 

    কীসের ভিত্তিতে এই সুদ নির্ধারিত হয়? সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, আর্থ-সামাজিক নানা দিকগুলিকে যেমন এক্ষেত্রে হিসেবে আনা হয়, তেমনই সরকারি লগ্নিপত্রের সুদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই প্রকল্পগুলির সুদ নির্ধারিত হয়। সেই সুদের হারের প্রসঙ্গ চলতি মাসে প্রকাশিত মাসিক বুলেটিনে এনেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেখানে তারা বলেছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হারের বদল আনেনি কেন্দ্রীয় সরকার। আর সুদের যে হার চালু রয়েছে, তার সঙ্গে সরকারি লগ্নিপত্রের সুদের হারের সামঞ্জস্য রয়েছে। কিন্তু বাধ সেধেছে রেকারিং ডিপোজিট এবং পিপিএফ। এই স্কিম দু’টিতে সুদের হার অনেকটাই কম। মোট কথা, স্বল্প সঞ্চয়ের অন্যতম জনপ্রিয় স্কিম দু’টির সুদের হারে মোদি সরকার যে দেশবাসীর সঙ্গে বঞ্চনা করে চলেছে, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে খোদ আরবিআই।
  • Link to this news (বর্তমান)