• খাদ্যপণ্যের চড়া দামের প্রভাব পড়ছে ভোটে? শঙ্কায় বিজেপি
    বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যে ভারতীয় অর্থনীতির কাছে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা, তা দিনকয়েক আগেই ফের স্পষ্ট করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু এই মাথা যে গেরুয়া শিবিরের রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তা দেখা যাচ্ছে ভোটপর্বের মাঝে। লোকসভা নির্বাচন পর্বে মাত্র দু’দফা মিটেছে। আর এই দু’টিতেই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে ভোটদানের হার। টুইস্টের শেষ এখানেই নয়। একইসঙ্গে প্রচারেও বেসুরো ঠেকছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস। দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, জনমত হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে না তো? এই আশঙ্কাতেই ঘি ঢালছে খাদ্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম। গম, আটা, চিনি, দুধ, ডাল, আলু, টম্যাটো, পেঁয়াজ—সাধারণ মানুষের খাদ্যসামগ্রীর দাম গত এক সপ্তাহে লাফিয়ে বেড়েছে। তাতেই কপালে ভাঁজ বাড়ছে মোদি সরকারের। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রককে এ ব্যাপারে বাড়তি উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে পিএমও। সেই মতো কৃষি, খাদ্য, গণবণ্টন, বিদেশ, প্রাণীসম্পদের মতো মন্ত্রক নিজেদের মধ্যে ঘনঘন বৈঠকে বসছে। কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব সঞ্জীব চোপড়ার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রক বৈঠকে দাম কমানোর দিশা খুঁজছেন ২৩ জন আধিকারিক।

    এ পর্যন্ত দু’দফায় ভোট হয়েছে মাত্র ১৯০ আসনে। আগামী পাঁচ দফায় হবে ৩৫৩ আসনের ভাগ্য পরীক্ষা। সাধারণ মানুষের হেঁশেলে যদি নিত্যদিন মূল্যবৃদ্ধির আগুন জ্বলে, তার প্রভাব ম্যাজিক ফিগার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পড়বেই। তাই কীভাবে অন্তত একটা মাস নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে রাখা যায়, সেই উত্তরই খুঁজছে পিএমও। কারণ, ‘ভারত’ ব্র্যান্ডের আটা, চাল, ছোলার ডাল সস্তায় সরবরাহ করেও কাজে দিচ্ছে না বলে রিভিউ বৈঠকে উঠে এসেছে। বিক্রির জন্য ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ‘ভারত আটা’ বরাদ্দ করা হলেও ৮.৯৫ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি বিকোয়নি। একই হাল ‘ভারত চালে’রও। ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন বরাদ্দ হলেও বিক্রি হয়েছে স্রেফ ৫.১৮ লক্ষ মেট্রিক টন। কেন্দ্রের যুক্তি, বিক্রি হলেও এই সব খাদ্যপণ্যের প্রচার ঠিকমতো হচ্ছে না। দেশের ৫১ শতাংশ মানুষ ভারত আটা, বা চাল-ডালের কথা জানেই না। তাই টিভি, রেডিওতে প্রচার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারত ব্র্যান্ডের অতিরিক্ত ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আটা এবং ১১.৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল বিক্রির জন্য ‘প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড’ থেকে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকাও বরাদ্দ হচ্ছে। অর্থাৎ মোদি সরকার মনে করছে, এভাবেই ৩০ জুন পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

    কিন্তু সত্যিই কি সেটা হবে? কারণ, অর্থনৈতিক মহল মনে করছে, শুধু ভারত ব্র্যান্ড দিয়ে গোটা দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানা সম্ভব নয়। সামগ্রিকভাবে খাদ্যসামগ্রীর দামের দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে। দেশবাসীর মাথাপিছু আয়ও একটা বড় ফ্যাক্টর। কারণ, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কিছুতেই আম জনতার উপার্জন বাড়ছে না। গত বছরের হিসেব ধরলেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে ১.৫৯ থেকে ৫৮.২৫ শতাংশ। আর এই উদ্বেগজনক তথ্য জানা গিয়েছে মোদি সরকারের আন্তঃমন্ত্রক বৈঠকের নোট থেকেই। তাই অশনি সঙ্কেত নরেন্দ্র মোদির। ভোট বাকি আরও পাঁচ দফা। 
  • Link to this news (বর্তমান)