• দলীয় প্রার্থীর নাম নিয়ে দিশেহারা গেরুয়া শিবির
    বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: তীরে এসে তরী ডোবার অবস্থা বিজেপির। ঘোষিত প্রার্থী দেবাশিস ধরের মনোনয়ন বাতিল হতেই এমন এক অভূতপূর্ব সঙ্কটে পড়েছে বীরভূম জেলার গেরুয়া শিবির। মোকাবিলার পথ খুঁজতে দিশেহারা নেতারা। তার মধ্যেই পিঠোপিঠি মোদি-যোগীর সভা। 

    প্রাক্তন আইপিএস কর্তা দেবাশিসের নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘোষণা করার পরই পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। জোরকদমে দেওয়াল লিখনও শুরু করেছিলেন তাঁরা। তারপর যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! দেবাশিসের মনোনয়ন বাতিল। এখন  পুরনো দেওয়াল লিখন মুছে, নতুন প্রার্থীর নাম লেখা হবে কি না,  তা বলতে পারছেন না কেউই। আদালতের ভরসাতেও আর বেশিদিন বসে থাকা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই বিকল্প প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্যকে নিয়েই প্রচার সারছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু শরীরিভাষা বদলে  গিয়েছে। মনোবল ঠেকেছে তলানিতে। ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ঢোঁক গিলে জনতা জনার্দ্দনকে শুধু বলছেন, পদ্মফুল চিহ্ন দেখেই ভোট দিন। গেরুয়া শিবিরের এহেন সঙ্কটকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছে শাসকদল তৃণমূল। তারা বলছে, যারা প্রার্থী কে, তাই ঠিক করে বলতে পারছে না তারা আবার কিসের গ্যারান্টি দেয়?

    রবিবার দুবরাজপুর বিধানসভার পাঁচড়া, ভীমগড়, কেন্দ্রগড়িয়া, পারশুণ্ডী সহ একাধিক জায়গায় প্রচার করেন দেবতনু। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অনুপ সাহা। বেশ কিছু জায়গায় দেবতনু নিজেই বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দেওয়ালে নিজের নাম লেখেন। ফলে, বোঝাই যাচ্ছে আদালতের ভরসাতে আর বসে থাকতে রাজি নয় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দেবতনুকেই এবার প্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে প্রচার শুরু করছে। কিন্তু আবার আদালতের রায় যদি দেবাশিসবাবুর পক্ষে যায়, তখন বিজেপি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাও ভাবাচ্ছে দলের একাংশকে। এই নিয়ে জেলা নেতৃত্বও নাকি খোলসা করে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে না মণ্ডল কিংবা বুথস্তরের কমিটিগুলিকে। ফলে এই পরিস্থিতিতে ঘরে, বাইরে উভয় সঙ্কটে বিজেপি নেতৃত্ব।

    বীরভূম লোকসভাতে আগামী ১৩ মে ভোট। সেক্ষেত্রে হাতে প্রচারের জন্য সময় আর মাত্র ১২ দিন। ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৫টি শহর এলাকা রয়েছে। প্রায় সব জায়গাতেই বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দেবাশিস ধরের নাম লেখা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বাড়ির দেওয়াল—সর্বত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম। এখন সেইসব দেওয়াল মুছতেই তো কয়েকদিন চলে যাবে! তারপর নতুন প্রার্থী দেবতনুর নাম লেখা আরও সময় সাপেক্ষ। এই অবস্থায় দলীয় সূত্রে শোনা যাচ্ছে, দেওয়াল সর্বত্র না মুছে নতুন করে দেওয়াল লিখতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে একই দেওয়ালে বিজেপির হয়ে দুই প্রার্থীর নাম থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! 

    সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপির সবচেয়ে বড় ধাক্কা যে প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিসবাবুর প্রার্থীপদ বাতিল, তা একবাক্যে মানছেন জেলাস্তরের নেতারাও। এমনিতেই বোলপুর আসনটি দুর্বল বলে ভোট ঘোষণার পর থেকেই আড়ালে-আবডালে বলছিলেন বিজেপির জেলা নেতারা। আর বীরভূম আসনে তৃণমূলের ৩ বারের জয়ী সাংসদ শতাব্দী রায়ের বিরুদ্ধে প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধরের জোরদার লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তাও বিঁশ বাও জলে গেল। এত ঢাক, ঢোল পিটিয়ে বিজেপি প্রচারে নামলেও ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই তাদের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এদিকে, দলের জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা এই অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দেবাশিসের মোবাইল বন্ধ। তাঁকে নতুন প্রার্থীর হয়ে প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। কেবলমাত্র বিধায়ক অনুপ সাহা নতুন প্রার্থীর সঙ্গে ঘুরছেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মফুলের ছাপ দেখে মানুষ ভোট দেবেন। আর মোদিজির মুখটা মানুষ মনে করবেন। আমরা আদালতের দারস্থ হয়েছি। তৃণমূল শত চক্রান্ত করেও আমাদের রুখতে পারবেনা।’

    অন্যদিকে, অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে তৃণমূল নেতারা। শতাব্দীও চনমনে। রবিবার তিনি হাসন এলাকায় প্রচার করেন। সেখানে বিজেপিকে কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘লগ্নভষ্ট হওয়ার মতো ব্যাপার। বিয়ে করতে এসে দেখলো অন্য কেউ বিয়ে করে নিচ্ছে। আমি দেবাশিসবাবু প্রার্থী থাকলেও জিততাম। এখনও বলছি জিতব। কারণ আমি কাজ করেছি।’  প্রচারে বেরিয়েছেন বিজেপির নতুন প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)