• তীব্র দাবদাহে মাঠেই পুড়ে খাক ফসল জলের অভাবে নষ্ট হওয়ার মুখে তিল থেকে পটল
    বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়ছে জমির ফসল। জলের অভাবে মাঠের কলাগাছ থেকে তিল, পাট কিংবা লঙ্কা, পটল সহ বিভিন্ন আনাজ নষ্ট হওয়ার মুখে। এই তাপপ্রবাহ কতদিন চলবে তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন চাষীরা। বৈশাখ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রার পারদ চড়তে চড়তে ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি নেই। কড়া রোদ আর তাপপ্রবাহের কারণে সমস্ত জমির ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। করিমপুরের এক চাষি মান্নান মণ্ডল বলেন, সপ্তাহে তিনদিন জলসেচ দিয়েও পটলের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির জল না হলে এই গাছ টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। তার উপর পোকার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে। একই অবস্থা লঙ্কা, ঝিঙে, কুমড়ো কিংবা বেগুনের খেতে। কুমড়ো চাষি দীপক সরকার জানান, চৈত্র মাসের প্রথমে কুমড়ো চাষ করব বলে বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। পরে বৃষ্টি না হওয়ায় বাধ্য হয়েই শ্যালো মেশিনের সেচের জল দিয়ে বীজ বপণ করেছি। কিন্তু একদিন অন্তর সেচের জল না দিলেই জমি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। এভাবে একশো টাকা লিটার দরে ডিজেল কিনে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরেক চাষি বলেন, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাওয়ায় জলের পরিমাণ কমে গিয়েছে। এক ঘণ্টার জায়গায় সেচ দিতে হচ্ছে দুই ঘণ্টা। ফলে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। আবার সেচের জল না দিলেও গাছ মারা যাবে। এলাকার পাট চাষি প্রকাশ প্রামাণিক জানান, মাঠে পাট বোনার সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির জল না হওয়ায় বেশিরভাগ চাষি সেচের জলে পাট বীজ বপন করেছেন। কিন্তু পাটের চারা গাছের অবস্থা খুব খারাপ। সবেমাত্র বীজ ফেটে পাতা বেরোতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক আবহাওয়া থাকলে গাছ বেরোনোর পর একবার জলসেচ দিলেই হত। কিন্তু এতো শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য পাট চাষিরা দু’বার জল সেচ দিয়েও স্বস্তি পাচ্ছেন না। এখন আমাদের কি করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছি না। হোগলবেড়িয়ার একজন কলাচাষি উত্তম মণ্ডল বলেন,  এই রুক্ষ আবহাওয়ায় কলাগাছ বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। এমনিতেই এলাকায় ব্যাপক কলার চাষ হচ্ছে। ফলে কলার বাজারদর খুব খারাপ। অন্য বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে কলা বিক্রি করতে হচ্ছে। তার উপর সপ্তাহে দুই/তিন দিন সেচ দেওয়ার বিরাট খরচ বহন করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। একদিন পরপর জলসেচ দিয়েও গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। জমির অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। গাছের কলার বৃদ্ধি হচ্ছে না এবং কলা পুষ্ট হওয়ার আগেই হলুদ হয়ে পেকে যাচ্ছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, তীব্র গরমে এবং বৃষ্টির অভাবে শুধু জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে তাই নয়, ক্ষতির সম্মুখীন এলাকার আম, লিচু, কাঁঠাল চাষও। আম লিচুর মুকুল দেখা দিলেও মাটিতে রস না থাকায় সব ঝরে পড়ছে। অনেক চাষি আম লিচু বাগানেও সেচের জল দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
  • Link to this news (বর্তমান)