• ‘প্রকৃতির উপরে হাত নেই, কিন্তু সরকার কবে ভাববে আমাদের কথা’
    আনন্দবাজার | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়ছে কৃষিকাজে। চাষিদের দাবি, প্রকৃতির উপরে কারও হাত নেই, কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কিছু নিয়মের বদল হলে বিমার টাকা পেতে বা চাল রফতানি করতে সুবিধা পেতেন তাঁরা।

    ধান, আলুর ফলন কমে যাওয়া, দাম না পাওয়া, সেচের জলের অভাব সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করতে গিয়ে মুশকিলের অভিযোগ বার বার করেছেন চাষিরা। বিমা পেতে অসুবিধা, ফসল সংরক্ষণ করার অসুবিধার কথাও সামনে এসেছে। ভোটের মুখে ‘দাদা-দিদিরা’ যদি কী করেছেন সেই বুলি না আউড়ে, ভবিষ্যতে কী করবেন বা সমস্যা ধরে ধরে কী সমাধান করা যায়, তার উপায় খুঁজতেন তাহলে অনেক ভাল হত দাবি তাঁদের।

    এ বছরে বৃষ্টির জন্য দু’বার আলুর চাষ করতে হয়েছে। গত বছরের চেয়ে আলু চাষের এলাকাও কমেছে। তার উপর আলু তোলার সময় কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশার ফলে নাবিধসা রোগেও আলু নষ্ট হয়। গত বছর জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। ফলন হয়েছিল ১,৯০,৩৬৬৮ টন। এ বার ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু হয়েছে ১১,৯৭,৮৪৮ টন। হিসাব বলছে প্রতি হেক্টরে ন’টন আলু কম পেয়েছেন চাষিরা। বিমার দাবিতে জেলা প্রশাসনের কাছে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। তবে এখনও টাকা ঢোকেনি।

    নিম্নচাপের জেরে আমন ধানের মোট ফলন তেমন ধাক্কা খায়নি, তবে মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর জেলায় প্রতি হেক্টরে ৫.৪ টন ধান উৎপাদন হয়। এ বছর নিম্নচাপের আগেই ৩ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ‘ক্রপ কাটিং’ করে দেখা যায় গড় উৎপাদন ছিল প্রতি হেক্টরে ৫.৫ টন। আর নিম্নচাপের পরে পড়ে থাকা ধানের গড় উৎপাদন হয় প্রতি হেক্টরে ৪.৮ টন। সুগন্ধী বা গোবিন্দ ভোগ ধানের প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ছিল ৩.৫ টন। কিন্তু সেই ধান সরকারের ঘরে বিক্রি করতে গিয়ে নানা সমস্যার অভিযোগ করেছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, সরকারের কাছে গেলেই প্রতি বস্তায় (৬০ কেজির বস্তা) দু’থেকে পাঁচ কেজি খাদ বাদ যায়। তবে কেন, তার ব্যাখ্যা মেলে না। কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় প্রচারে এসেও ধান কেনার গতি যে ধীর, তা কার্যত মেনে নেন। এখনও চাষির ঘরে দাম না থাকলে সরকারকেই তা দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। প্রয়োজনে সেই এলাকায় গাড়ি পাঠিয়ে ধান মেপে আনার ব্যবস্থা করতে বলেন।

    রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ রাজ্যের মধ্যে গোবিন্দ ভোগ ধানের ‘গোলা বলে পরিচিত। সেখানেও কেন্দ্র সরকারের রফতানি নীতির জন্য পর্যাপ্ত দাম মিলছে না, দাবি চাষিদের। তাঁরা জানান, কেন্দ্র সরকার ২০% রফতানি মূল্য বাড়ানোয় রফতানিকারকেরা গোবিন্দ ভোগ কিনতে চাইছেন না। ফলে চালকলগুলিও কিনছে না। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের দাবি, ‘‘গোবিন্দ ভোগ চালে রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কয়েক বার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন।’’

    সম্প্রতি বর্ধমানের নাড়ি গ্রামে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, “প্রথাগত চাষে অনীহা চলে এসেছে চাষিদের। দাম পাচ্ছেন না বলে অনেকে চাষে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে রিকশা-ভ্যান টানছেন। তাঁদের চাষে ফিরিয়ে আনার জন্য বিকল্প চাষে নজর দিতে হবে। শুধু ঋণ দিলে হবে না, প্রশিক্ষণ দিয়ে দেখাতে হবে চাষে লাভ হচ্ছে।” তৃণমূলের দাবি, বহু দিন থেকেই বিকল্প চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলার বিধায়ক (রায়না) শম্পা ধাড়া বলেন, “কেন্দ্রের নীতির জন্যই গোবিন্দ ভোগের দাম নেই, বিমার টাকা পেতেও চাষিদের দেরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর মানবিকতার জন্য চাষিরা বছরে দু’বার চাষের খরচ পাচ্ছেন, ফসলের দাম বেড়েছে। চাষিদের উন্নতি ঘটছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)