• রেলশহরে দায়িত্বে কে, ধন্দ তৃণমূলেই
    আনন্দবাজার | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • খড়্গপুর শহরে তৃণমূলের দায়িত্বে কে! এই নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কারণ পিংলার সভায় বসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলশহর দেখার দায়িত্ব তাঁকে দিয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিধায়ক অজিত মাইতি। যদিও মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, এমন কথা তাঁদের অজানা। এই আবহে আবার দলনেত্রী জেলা ছাড়ার পরেই তড়িঘড়ি রেলশহরে বৈঠক করলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।

    শুক্রবার রাতে খড়্গপুর শহরের ইন্দায় একটি লজে রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠক হয়। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায় প্রমুখ। শহরের নির্বাচনী কমিটি ছাড়াও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি (কাউন্সিলর) ও ওয়ার্ড সভাপতিদের। যদিও অজিত ছিলেন না সেখানে। খড়্গপুর শহরে তৃণমূলের প্রচারের পর্যালোচনা নিয়ে বৈঠক হয়। প্রচারে গতি বাড়ানোর কথা বলা হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘আমাদের নেতা কে সেটা আগে ঠিক করে দেওয়া হোক।” যদিও তারপরে অবশ্য বৈঠক বেশিদূর এগোয়নি। ছোট আয়মায় কার্যালয় নিয়ে গোলমালের খবরে শহরের নেতারা সেখানে চলে যান। ফলে মাঝপথেই শেষ করতে হয় বৈঠক। মন্ত্রী মানস বলেন, “এই রেলশহরে বিধানসভা বিজেপির। লোকসভায় দিলীপ ঘোষ ভাল ফল করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে বাড়তি গুরুত্ব তো দিতেই হবে। খড়্গপুরে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা ভাল কাজ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে সমস্ত ওয়ার্ড সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ওয়ার্ড সভাপতি ও কাউন্সিলররা সমন্বয় রেখে কাজ করছেন। পর্যালোচনায় দেখলাম ভাল কাজ হচ্ছে। প্রচারে আর একটু গতি বাড়াতে হবে বলেছি।” খড়্গপুরের শহর তৃণমূলের নেতৃত্ব তো তাঁদের নেতা কে, সেটা আগে ঠিক করে দিতে বলছেন? মানসের উত্তর, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সর্বোচ্চ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি খড়্গপুরে এসে যা বলার বলে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন কথা কম কাজ বেশি। আমিও সেটা বৈঠকে জানিয়েছি।”

    গত লোকসভায় বিজেপিকে ৪৫ হাজার ‘লিড’ দিয়েছিল খড়্গপুর বিধানসভা। এ বার নির্বাচনে সেখান থেকে ১ লক্ষ ‘লিড’ চেয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই পরিস্থিতিতে খড়্গপুর শহরে বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হচ্ছেই তৃণমূলকে। মমতাও রেলশহরে বাড়তি নজর দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে এই শহরে তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এমনিতেই এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত রাজ্যের শাসক দল। নেতাদের মধ্যে নানা টানাপড়েনও রয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার সঙ্গে প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক অজিত মাইতির সম্পর্ক শীতল। এই পরিস্থিতিতে অজিতকে খড়্গপুরের দায়িত্ব দিয়েছেন দলনেত্রী— এই খবরে খড়্গপুর শহর তৃণমূলের মধ্যে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অজিতের দাবি, “দিদি আমাকে খড়্গপুর শহরে নির্বাচনে একটু দায়িত্ব নিয়ে সংগঠন দেখার কথা বলেছেন। আমি না করতে পারিনি। আর মানসদাকে ঝাড়গ্রামে যেতে বলেছেন।”

    দলনেত্রী যে তাঁকে ঝাড়গ্রামে সংগঠনের কাজে সহযোগিতার কথা বলেছেন, তা স্বীকার করেছেন মানস ভুঁইয়া। তবে অজিতকে খড়্গপুর দেখার কথা নেত্রী বলেছেন কি না তা তিনি জানেন না বলেই দাবি মানসের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে মানস ভুঁইয়া ও সুজয় হাজরার উপস্থিতিতে তড়িঘড়ি খড়্গপুর শহর নিয়ে বৈঠকও তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় বলছেন, “নেত্রী এমন কিছু বলেছেন কি না আমার জানা নেই। তবে নেত্রী আমাকে, মানসদাকে খড়্গপুরে একটু সময় বেশি দিতে বলেছেন। তবে যে কেউ যেখানে খুশি গিয়ে সংগঠনের জন্য কাজ করতে পারেন। সেই অনুযায়ী নেত্রী কাউকে খড়্গপুর দেখার কথা বলতেই পারেন। কিন্তু এখানে (মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায়) অজিতদা সংগঠনের কোনও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন না।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)