• দরবার করে ভোটের কাজ আদায় প্রতিবন্ধী শিক্ষকের
    আনন্দবাজার | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • বাঁ হাতের কব্জি থেকে নেই। তিনি ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন’। নথিপত্র দেখে ভোটের ‘ডিউটি’ থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। কার্যত ভেঙে পডে়ছিলেন ভানুপ্রকাশ দে নামে হুগলির হরিপালের দ্বারহাট্টা রাজেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের ইতিহাসের ওই শিক্ষক। সরকারি কর্মী হিসাবে তাঁকে নির্বাচন অর্থাৎ ‘দেশের কাজ’ থেকে বঞ্চিত না করার আবেদন জানান প্রশাসনের কাছে। তাঁর আর্জি মঞ্জুর করেছে জেলা নির্বাচন দফতর ‌তথা প্রশাসন। তারা জানিয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিয়ে বিশেষ বুথে ভোটকর্মী হিসাবে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

    নানা কারণে ভোটের কাজ থেকে যেখানে অব্যাহতি চান বহু সরকারি কর্মী, সেখানে ভানুপ্রকাশে এই আগ্রহের প্রশংসা করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। প্রশাসনের পদক্ষেপে বেজায় খুশি হরিপালের ওই শিক্ষক। তিনি জানান, স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি তিনি যাবতীয় কাজ করেন। মোটরবাইক চালাতে পারেন। নিয়মিত সাঁতার কাটেন, যোগব্যায়াম করেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কাজেই তেমন সমস্যা হয় না। নিজেকে প্রতিবন্ধী বলে ভাবিও না। তুচ্ছ কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেও চাই না। ভোটের দায়িত্ব অন্যদের মতোই পালন করতে পারব।’’

    জেলাশাসক মুক্তা আর্য নিজে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে ভানুপ্রকাশকে বাহবা দিয়ে গিয়েছেন। জেলাশাসক জানান, এ বার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা রয়েছে, প্রতি জেলায় অক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিদের (পার্সনস উইথ ডিজ়এবিলিটি) নিয়ে বুথ থাকবে। সেই অনুযায়ী হুগলিতেও এমন একটি বুথ থাকবে। সেই বুথে ভোটকর্মীর দায়িত্ব পালন করবেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সরকারি কর্মীরা। সেখানেই ভানুপ্রতাপ দায়িত্ব সামলাবেন। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘যাঁরা পারবেন, তাঁদেরই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, এই ব্যক্তিরা সমাজের মূলস্রোতেই আছেন। পড়াশোনা করেছেন, সরকারি চাকরি করছেন, সাধারণ জীবনযাপন করছেন। কোনও ক্ষেত্রেই তাঁরা পিছিয়ে নেই। ভোটের দায়িত্ব পালনেও তাঁরা সক্ষম।

    ভানুপ্রতাপ স্কুলে চাকরি করছেন ২০০৭ সাল থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুরে কর্মরত থাকার সময় ৪ বার, ২০১৮ সালে হুগলিতে আসার পরে ৩ বার ভোটের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাদ পড়েন গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে। তিনি বলেন, ‘‘চতুর্দিকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভোটের ডিউটি করতে যাবেন। আমার স্কুলের প্রায় সকলেই দায়িত্ব পেয়েছেন। সেখানে আমি বাড়িতে বসে থাকব, সেটা মানতে পারিনি। নির্বাচনের কাজকে দেশের কাজ বলেই মনে করি।’’

    এ বার ভোটকর্মীদের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়তেই ভানুপ্রকাশ জেলাশাসকের কার্যালয়ে দরখাস্ত জমা দেন তাঁকে ওই দায়িত্ব দেওয়ার আর্জি জানিয়ে। বিষয়টি জেলাশাসকের কানে যেতেই তিনি তৎপর হন। ভানুপ্রকাশ বলেন, ‘‘আমার মতো অনেকেই এই দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা যে পিছিয়ে নেই, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে তা প্রমাণ করে দেব।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)